শামিম হাসান সদা হাস্যজ্জল প্রানবন্ত একজন মানুষ।তিনি সরমা হাউজে অন্যতম স্বত্বাধিকারী।
যেখানে স্বপ্ন থাকে, সেখানে বাধা থাকে। আর সকল বাধা পেরিয়ে স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাওয়াকে বিজয় বলে ৷
তিনি জয় করেছেন লাখো মানুষের মন।
সরমা হাউজ একটি ব্রান্ড। অনেক পথ পেরিয়ে যে খুজে নিয়েছে তার আপন নিলয়।
গভমেন্ট ল্যাবরেটরিস হাই স্কুলে যার শিক্ষাজীবন শুরু। তারপর ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ শেষ করে ঢাকা কলেজ। রয়েল রোডস ইউনিভারসিটি, কানাডা থেকে এমবিএ।
নিয়ম করে তিনি রেগুলার গল্ফ খেলেন।কুর্মিটোলা গল্ফ ক্লাব তার জন্যে অপেক্ষায় থাকে প্রতিদিন। এটা তার প্যাশন। আর্মির রুটিন মাফিক জীবন ছেড়েছেন সেই কবে। রয়ে গেছে নিয়মানুযায়ী জীবন ধারনের ধারা।
করোনা ভাইরাস, লকডাউন এবং আগামীর পৃথিবী, এসব নিয়ে কথা হচ্ছিলো তার সাথে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হচ্ছে। তাই আড্ডা জমেছিল ফোনে।
ব্যাবসা বানিজ্য দারুণ ভাবে ইফেক্টেড। স্বপ্ল পরিসরে হলেও প্রতিষ্টান খুলে রাখতে হচ্ছে।দুটো কারনে প্রতিষ্টান খোলা রাখতে হচ্ছে:
১. আমার ছেলেরা যেনো অসুস্থ না হয়। কর্মচারীদের ছুটি দিয়ে দিলে মুভমেন্টের ফলে তাদের জন্য রিক্সফেক্টর সৃষ্টি হতে পারে।
২. খাবার মানুষের বেসিক নীড, যেকোন অবস্থায় তার খাবার প্রয়োজন হয়। এটিকে মাথায় রেখে প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে হয়েছে। যে কেউ যেনো চাইলে তার কাছে খাবার পৌছানোর ব্যবস্থা করা যায়।
সরকার নির্ধারিত সময় মেনে আমাদের প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছে।
বেচাকেনা খুব একটা নাই। অনলাইনে কিছু ডেলিভারি দেওয়া যাচ্ছে বিশেষ করে ফুড পান্ডা, পাঠাও ফুড, উবার ইটস, হাংগ্রিনাকি,সহজ ফুড -এর মাধ্যমে।
৯০% দোকান বন্ধ করে দিয়েছে,আমরা চালু রেখেছি। এতে হচ্ছে কি আমাদের লস একটু কম হবে। যদিও আমি চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব কম লস করে টিকে থাকতে।
সামনে কিছুটা রিলাক্স হতে পারে। ফুড পান্ডা চেষ্টা করছে রাত ১০টা পর্যন্ত পার্মিশান নেবার, এটা হলে ভালো হবে।
যেহেতু এটা খাবার দোকান, একটা বেসিক নীডের যায়গায় চলে আসে, হয় আমরা অনলাইন ডেলিভারি দিবো কিম্বা লকডাউন প্রলম্বিত হলে সরকার যদি কোনো কারনে বলে খাবার সাপ্লাই দাও, সরকারকেও আমরা সাপ্লাই দিতে পারবো।
কর্মচারীর বেতন, হাউজ রেন্ট, ইউটিলিটি এগুলো চালিয়ে রাখতে হচ্ছে। লস টানতে, হচ্ছে কিছু করার নাই।আমাদের এথিকস আমরা শ্রমিকদের বেতন ভাতা দিয়ে যাবো।ওদের মাসিক বেতনতো খুব একটা বেশি না, বেতন না পেলে চলবে কি ভাবে।
সরকার যে প্রনদনা ঘোষনা করেছে এর মধ্যে স্মল এন্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রেনার আছে।
এটি সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। ইন্টারেস্ট রেট যেহেতু কম, এটা ব্যবসায়ীদের উপকারে আসবে।
আমি যেহেতু স্মল এন্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রেনারের মধ্যে পড়ি, আমার জন্যে এটি নি:সন্ধেহে একটি ভালো খবর।
করনা পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে উনার ভাবনা খুব ক্লিয়ার। মোটেও হতাশাগ্রস্থ নন তিনি।
অনেক বড় সব দুর্যোগ ইতি মধ্যে পার করেছে বাংলাদেশ। এটিও পার করে যাবে।
ভারচুয়াল অফিস কিম্বা রিমোট অফিস আগে থেকেই আছে কিন্তু আমাদের সাইকোলজি, ৯ টায় অফিস আসতেই হবে, এই ধারনা থেকে হয়তো কিছুটা হলেও বেরিয়ে এসে কাজটাকে রেজাল্ট ওরিয়েন্টেড করার সময় এসে গেছে। আর ই কমার্স, এই যে এখন এই মূহুর্তে জরুরী সেবা হিসেবে ই কমার্স একটা যায়গা করে নিয়েছে। অপনার ধরেন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি থেকে বিলাস সামগ্রী সবকিছুর জন্যে ই কমার্সের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
একটা সময় কর্পোরেট অফিস কিম্বা সরকারের ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল অফিস হয়তো ডেভেলপ করবে কিম্বা একটা শ্রেণীর মানুষ হয়তো সিরিয়াসলি ই- কমার্স ডেভেলপ করে যাবে কিন্তু আমার দেশে ১ কোটির উপর হকার আছে, রিক্সা পুলার বা ধান কাঁটা শ্রমিক এদের কাছে আসলে এসবের কোনো মূল্য নাই।
উন্নত বিশ্ব কিম্বা চিনের সাথে আমাদের যাবে না। তাদের মডেলের সাথে আমাদের মেলানো যাবে না। ইভেন কি লকডাউন পলিসিও আমাদের, উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে পারা সম্ভব হবে না। লকডাউন অর নট লক ডাউন একটা বিতর্ক উঠছে। আমাদের মত দেশগুলোতে করোনা ভাইরাসে যতজন মারা যাবে লকডাউনের কারনে, না খেতে পেয়ে মারা যাবে তার চেয়ে বেশি।
চিনে প্রতিদিন ১ কোটি মানুষকে বাসায় রেখে খাবার সরবরাহ করেছে সরকারি ব্যবস্থাপনায়, যা আমাদের এখানে আদৌ কি সম্ভব?
এখানে আমাদের সবকিছু ওপেন করতে হবে কারন আমাদের দেশের শ্রমিক, কুলি মজুর, ড্রাইভার, হেল্পার, ক্ষেত মজুর, গার্মেন্টস কর্মী কয়েক কোটি যাদের সরকার চাইলেও বসে খাওয়াতে পারবে না। সুতরাং ওপেন করতে হবে সবকিছু এবং জুতা আবিষ্কারের মতন সারা পৃথিবী চামড়া দিয়ে না ঢেকে নিজের পা বাচানোর জন্যে পা ঢেকে ফেলতে হবে।
কথার কথা রিক্সাওয়ালাকে গিয়ার পড়ে রিক্সা চালাতে হবে, যাতে তার কাছ থেকে অন্য কারো না ছড়ায় সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ট্রেনিং দিতে হবে এগুলো প্রিভেন্টিভ মেজার।
৪ মে-এর পরে মনে হয় না কড়াকড়ি ভাবে লকডাউন রাখা ঠিক হবে। আর রাখতে চাইলে তা সম্ভব হবে না।মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসবে। কারন মানুষ তাদের নিডকে উপেক্ষা করতে পারবে না।
তিনি বলেন,
‘‘শুধু করোনা নিয়ে থাকলে তো চলবে না! কিছু কিছু সিদ্ধান্ত কার্যকর করা জরুরী। খুব জরুরি, যেগুলি মানুষের প্রয়োজন রয়েছে, তেমন গতিবিধি চালু করা উচিৎ।গ্রিন জ়োন হিসেবে চিহ্নিত অত্যাবশ্যক এমন পণ্যের দোকান খোলার ছাড়পত্র দেয়া যেতে পারে। সিমিত আকারে বাস চলাচলের অনুমতিও দেওয়া যেতে পারে। তবে সব ক্ষেত্রেই পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধি মেনে চলা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
অনান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও প্রায় সব অর্থনৈতিক কাজকর্ম দীর্ঘদিন বন্ধ। অর্থনীতি ধীরে ধীরে সচল করা দরকার। সেই অনুযায়ী, সাধারণ মানুষের যে দোকানগুলি একান্ত প্রয়োজন, গ্রিন জ়োনে সেগুলি খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
কোন এলাকায় কী ধরনের দোকান খুলবে, কোন দোকান খুললে বেশি ভিড় হবে না, কোনটা একেবারে অপ্রয়োজনীয়— এ সব খতিয়ে দেখতে হবে পুলিশ প্রশাসনকে। ’
করোনা-সংক্রমণের তীব্রতা অনুযায়ী রেড, অরেঞ্জ এবং গ্রিন জ়োনে ভাগ করা জরুরি । রেড জ়োন বা তার ভিতরে থাকা কন্টেনমেন্ট এলাকায় কোনও নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা হচ্ছে না। অরেঞ্জ বা গ্রিন জ়োনে পরিস্থিতি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা হলেও সেখান থেকে করোনা-আক্রান্তের খবর পেলে ফের সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যেতে পারে।