মো: শামসুল আলম চৌধুরী এমবিএ ( জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি)
ইসলামে মানবজাতির জন্য কেবলমাত্র সৎকাজগুলোই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং শান্তি ও সম্প্রীতির বিষয়গুলোই প্রচারিত হয়েছে। ইসলামের মূল বিষয় হচ্ছে ‘একমাত্র আল্লাহর উপাসনা করা’ আর অহংকার, হিংসা, সমকামিতা, অবৈধ যৌনমিলন, ভণ্ডামি, অসত্যতা, দুর্নীতি, নৈরাজ্য, খুন, নিপীড়ন, অত্যাচার ও অবিচার সহ মানবজাতির জন্যে ক্ষতিকারক সকল বিষয়কে নিষিদ্ধ করা। পবিত্র কুরআন শরীফ কেবলমাত্র মুসলমানদের জন্য নয় সমগ্র মানবজাতির জন্য আল্লাহতায়ালা কর্তৃক সর্বশেষ ধর্মগ্রন্থ হিসাবে প্রেরিত হয়েছে। সহজ, সরল ও সৎ ভাবে জীবন-যাপনের বিষয়গুলো এখানে নির্দেশিত হয়েছে, আল্লাহর একত্ববাদ প্রচার করা হয়েছে, এবং বিশ্বাসীদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে উপরোক্ত বিষয়গুলির সাথে কি কেউ বিরোধিতা করতে পারে বা কোনো বিতর্ক করতে পারে? তাহলে, মুসলমানদেরকে কেন নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে? নিরীহ মুসলিম মহিলাদেরকে কেন ধর্ষণ করা হয়েছে? ‘গুচ্ছ বোমা’ দ্বারা মুসলিম শিশুদের কেন হত্যা করা হয়েছে? গুয়ানতানামো উপসাগরে কেন পবিত্র কোরআনকে অপমান করা হয়েছে? কোথায় ছিল তখন মানব সভ্যতা ও মানবতাবাদী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়? সভ্য বিশ্বের নেতারা কোথায় ছিল? আল্লাহ সর্বশক্তিমান, তিনি সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং তিনিই বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। কুৎসিত, ও বর্বর বিশ্ব নেতারা সম্ভবত: ইসলাম, ইসলামী একেশ্বরবাদ, মুসলমান এবং পবিত্র কুরআনকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। বিশ্বকে অবশ্যই জানতে হবে যে মহান আল্লাহতায়ালাই পবিত্র কুরআন ও ইসলামকে রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহতা’আলা তার আলোকে তিনিই রক্ষা করবেন যদিও অবিস্বাসীগণ তা নিভিয়ে দিতে চায় এবং অপছন্দ করে।” সুতরাং, মহামারী করোনা হচ্ছে প্রকৃতির প্রতিশোধ আর সীমালংঘনকারীদের জন্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ শিক্ষা। আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কোনো বিপদাপদই পৃথিবীতে আসে না এবং যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে আল্লাহ তাকে সৎ পথে পরিচালিত করেন এবং আল্লাহতায়ালা সর্বজ্ঞাত (সূরা তাগাবুন: আয়াত -১১) পবিত্র কুরআনের এই বাক্যে চারটি (চার) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে: ১) আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোন বিপদ/বিপর্যয় নেই, ২) আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস ৩) সঠিক পথে পরিচালিত হওয়া, এবং ৪) আল্লাহ সর্বজ্ঞাত।
সুরা তাওবার ৫১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “আল্লাহ আমাদের জন্য যা আদেশ করেছেন তা ব্যতীত আমাদের কিছুই কখনও ঘটবে না। তিনিই আমাদের রক্ষাকারী এবংআল্লাহর প্রতি অবশ্যই মুমিনদের ভরসা করা উচিত।” সুরা আল হাদিদের ২২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না; তা জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।” সুতরাং, আমার কোনও সন্দেহ নেই যে করোনা মানবজাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এক ভয়ানক শাস্তি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা সীমালংঘনকারীদের জন্যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বার বার উল্লেখ করেছেন। অতীতে মানবজাতিকে সৎ পথে ফিরিয়ে আনতেও তিনি অভিন্ন শাস্তি দিয়েছেন। আল্লাহ আমাদেরকে ধ্বংস করে অতীতের বিভিন্ন সময়ের মতো ‘নতুন’ জাতি তৈরি করতে পারেন বা পুনরুত্থানের দিনটিও সৃষ্টি করতে পারেন। আমি মনে করি যে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির সেরা মানবজাতিকে মহামারী করোনার মাধ্যমে শিক্ষা দিতে চান। আল্লাহ চান যে অতীতের শিক্ষা নিয়ে আমরা পাপের জন্য অনুশোচনা করি, ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে ফিরে আসি। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে যথাক্রমে ১০০ এবং ২০০ বার ‘ক্ষমা’ এবং ‘রহমত’ শব্দের উল্লেখ করেছেন। তিনি মানবজাতিকে অনুশোচনা করার এবং তাঁর নিকট থেকে ক্ষমা ও করুণা লাভের নির্দেশ দিয়েছেন। সুরা আয যুমারের ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেরাই সীমা লঙ্ঘন করেছ (মন্দ কাজ ও পাপ করে)! আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না: নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” সুতরাং করোনা আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত অতীতের মতোই ভয়াবহ এক শাস্তি যা-তে আমরা প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিতে পারি। বিশ্ব নেতাদের (বিশেষতঃ পশ্চিমা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ) আগ্রাসন, অন্যায়, ও বর্বরতার মাধ্যমে মানবজাতি ও মানবসভ্যতা ধ্বংস করার জন্যে আল্লাহর কাছে অনুশোচনা করার এটাই সর্বোত্তম সময়। আমাদেরকে অবশ্যই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, একমাত্র আল্লাহতায়ালার উপাসনা করতে হবে, পবিত্র কুরআনে বর্ণিত নির্ধারিত পথ অনুসরণ করতে হবে এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ন্যায়বিচার করতে হবে। মহান আল্লাহ যদি আমাদের প্রতিশ্রুতি ও কার্যোপ্রনালীতে সন্তুষ্ট হন তবে অবশ্যই তিনি মানবজাতিকে ক্ষমা করবেন এবং করোনা থেকে আমাদেরকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, পরম করুণাময় ও সেরা বিচারক!