মোঃ শামসুল আলম চৌধুরী, এমবিএ (জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি)
করোনাভাইরাস (COVID-19) সংক্রমণ চীন এর উহান প্রদেশে ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বরে শুরু হয় এবং প্রথম রোগী ২০২০ এর জানুয়ারীতে মারা যায়। তখন থেকে COVID-19 সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। ২৮ শে এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মোট ৩,০৮১,৩৬৫ জন সংক্রামিত হয়েছে এবং ২১২,৩৭৭ মানুষ মারা গেছে। প্রতি মুহূর্তে চিত্রটি বাড়ছে। কোনও ওষুধ এবং অ্যান্টিবডি উদ্ভাবিত হয়নি এবং মানুষ আজ পুরোপুরি বিপর্যস্ত। মানবজাতির মেধা ও সকল প্রকার শক্তি কার্যত: ব্যর্থ হয়েছে। এভাবে যদি আরো কয়েক মাস চলতে থাকে তাহলে পুরো সভ্যতাই হয়তো ধ্বসে পড়তে পারে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে কম আয়ের এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলির তুলনায় বিজ্ঞান নিয়ন্ত্রিত, উচ্চ-আয় এবং সামরিক দিক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশগুলোতেই করোনার ‘সর্বনাশা’ বহুগুণ বেশি। আর বিশ্বের ‘সেরা’ শক্তি আমেরিকা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। আমেরিকার পরেই আছে তার নিকটতম মিত্র দেশগুলো। কেবল আমেরিকাতেই ১,০১০,৫০৭ জন COVID-19 এ আক্রান্ত হয়েছে, যা বিশ্বের ৩২.৭৯%। ২৮ শে এপ্রিল পর্যন্ত আমেরিকাতে মারা গেছে ৫৬,৮০৩, যা বিশ্বের ২৬.৭৫%, তারপরে ইতালি (২৬,৯৭৭), স্পেন (২৩,৮২২), ফ্রান্স (২৩,২৯৩), যুক্তরাজ্য (২১,০৯২), বেলজিয়াম (৭,৩৩১), এবং জার্মানি (৬,১২৬)। ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত COVID-19 এ আক্রান্ত হয়ে NATO ভুক্ত দেশগুলোর মোট মৃত্যু ১৮০,০০০ এর বেশি, যা বিশ্বের ৮৪.৭৭%। অন্যদিকে, একই সময়ে সিরিয়ায় COVID-19 এ আক্রান্ত হয়েছে মাত্র ৪৩ জন আর মারা গেছে মাত্র ৩ জন, লিবিয়ায় ৬১ জন সংক্রামিত এবং ২ জন মারা গেছে, ইয়েমেনে কেবল ১ জন আক্রান্ত আর সেরেও উঠেছে সে। আফগানিস্তানে ১,৮২৮ জন আক্রান্ত হয়েছে আর মারা গেছে ৫৮ জন। রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের SHITHOLE দেশগুলিতে COVID-19 এ খুব সামান্যই ক্ষতি হয়েছে: হাইতি’তে সংক্রামিত – ৭৬ ও মৃত্যু – ৬, এল সালভাদোর: আক্রান্ত – ৩৪৫ ও মৃত্যু – ৮, এবং আফ্রিকা: ৩৪,১৯৭ এবং মৃত্যু ১,৪৭৫। আমি কখনোই অস্বাভাবিক মৃত্যু সমর্থন করি না এবং মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি যে Every Live Matters; সে মুসলিম, খ্রিস্টান বা অন্য যে কোনো বর্ণ বা ধর্ম হতে পারে। তবুও, সত্যবাদী হয়ে বলতে হবে যে সাম্প্রতিক দশকগুলিতে বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা সবচেয়ে বেশি ‘ভুক্তভোগী’ ছিল। মুসলমানদের বিরুদ্ধে সব ধরণের হত্যাকান্ডকে “মৌলবাদ” বা “সন্ত্রাসবাদের” নির্লজ্জ সংজ্ঞার আবরণে পশ্চিমা অভিযানের জন্যে ‘বৈধ’ করা হয়েছিল। এমনকি শিশু, বালক, বৃদ্ধ, রোগী এবং মহিলারাও পশ্চিমা সামরিক বাহিনীর ‘বর্বর’ হত্যাকাণ্ড থেকে মুক্তি পাননি। মুসলিম বিশ্বের ‘Class Less’ নেতারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্যে ‘কথা’ বলতেও ‘ভয়’ পেয়েছেন। লিবিয়া, ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, কাশ্মীর, ইয়েমেন এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ‘ধ্বংসলীলা’ আসলে ‘মানবতা’ এবং মানবসভ্যতাকে ‘সম্পূর্ণ’ ধ্বংস করে ফেলেছে। কেউ কাঁদেনি সেদিন – এক ফোঁটা অশ্রু বর্ষণও করেনি, কোনো মানবতাবাদী সংস্থা ‘দুঃখ’ প্রকাশও করেনি – মুসলমানদের বিরুদ্ধে ‘সবকিছু’ই যেন ‘বৈধ’ ছিল। সাদা ঐশ্বর্যে’র জনক রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প চলতি অভাবনীয় এবং অসহনীয় মৃত্যু ও আমেরিকানদের অকল্পনীয় দুর্ভোগের জন্য নিশ্চয়ই মুসলমানদেরকে মোটেই দায়ী করতে পারবেন না। যদিও তিনি মুসলিমদেরকে আমেরিকার একমাত্র ‘সমস্যা’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন। মসজিদগুলি নিরীক্ষণের জন্য ডাটাবেস করেছেন, মুসলমানদের surveille করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আমেরিকাতে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের অভিবাসনতো প্রায় অসম্ভব। তিনি জেরুজালেমকে ইস্রায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে কোটি কোটি মুসলমানকে হতাশ করে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরিত করেছেন। মুসলমানদের কী দোষ ছিল? মুসলিম শিশু ও নারীরা কেন এই সভ্য বিশ্বে ভুগেছেন? কিছু মুসলিম দেশকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রাখার ‘ভুয়া’ অভিযোগের আওতায় কেন ধ্বংস করা হয়েছে? আসলে তথাকথিত সভ্য ও আধুনিক রাষ্ট্রগুলোর কাছে মুসলমানদের সমস্যাগুলি ছিল: ১) ইসলামের শিক্ষাকে অনুসরণ করে মুসলিমরা একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা করে না ২) মুসলমানরা সমকামী বিবাহ বা সমকামিতা গ্রহণ করতে পারে না কারণ আল্লাহ মানবজাতিকে এ জাতীয় আচরণের বিরুদ্ধে ‘সতর্ক’ করে দিয়েছেন। অথচ আধুনিক সভ্যতার নামে সমকামী বিবাহকে বিভিন্ন দেশে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। সমকামিতার কারণেই আল্লাহতায়ালা লূত (আ:) এর সময়ে পুরো জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন (সূরা আল-আরাফ ৩: ৫) এবং ৩) মুসলমানরা পবিত্র কোরআনের শিক্ষাকে অনুসরণ করে, যা শেষ ও একমাত্র অবিকৃত ধর্মগ্রন্থ।