নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়াতে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটি শাখাকে ন্যূনতম তিনজন নারী উদ্যোক্তা খুঁজে বের করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শাখা রয়েছে প্রায় নয় হাজার। প্রতিটি শাখা থেকে কমপক্ষে একজন নারী উদ্যোক্তা বেরিয়ে এলেও বছরে নয় হাজার নতুন উদ্যোক্তা আসবে। তিনজন করে উদ্যোক্তা বের করতে পারলে ওই সংখ্যা হবে ২৭ হাজার।
এটি অর্থনীতিতে এবং বেকারত্ব দূর করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এ তিন নারী উদ্যোক্তা এমন হবেন, যারা ইতোপূর্বে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো প্রকার ঋণ গ্রহণ করেননি। তাদের প্রশিক্ষিত করার মাধ্যমে ঋণ দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।
৯ এপ্রিল এই সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই ও স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ। এতে বলা হয়, নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা আরো বাড়াতে পারলে সংশ্লিষ্ট শাখাকে প্রশংসিত করা হবে।
নারী উদ্যোক্তাদের অনুকূলে ঋণের প্রবৃদ্ধি ও উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নানাবিধ পদক্ষেপ ও কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ধীরে ধীরে এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে।
“বাংলাদেশের রাজনীতি ও ব্যবসা–বাণিজ্যে নারীর অংশগ্রহণ কম। দুই ক্ষেত্রেই তারা এগিয়ে আসছে। নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতার কথা বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছিল,” বেনারকে জানান রাষ্ট্রায়াত্ত একটি ব্যাংকের পরিচালক হাসিনা নওয়াজ। তিনি নিজেও একজন প্রতিষ্ঠিত নারী উদ্যোক্তা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিপত্রে নারী উদ্যোক্তার পছন্দ অনুযায়ী তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রতিবছর ন্যূনতম একজন নারী উদ্যোক্তাকে কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্রখাতে ঋণ প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া নতুন নারী উদ্যোক্তাদেরকে প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিল সহায়তা এবং এ ধরনের ঋণ কার্যক্রমের সাফল্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ক্যামেলস রেটিংয়ে প্রতিফলিত করার বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, নির্বাচিত নারী উদ্যোক্তাদেরকে তাদের পছন্দ অনুযায়ী শিল্প বা সেবা অথবা ব্যবসা কার্যক্রম নির্বাচন, মূলধন সংগ্রহসহ সার্বিক বিষয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে অথবা আঞ্চলিক পর্যায়ে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
এক্ষেত্রে প্রয়োজনে ব্যাংক বা ব্যাংক বহির্ভূত প্রতিষ্ঠানসমূহ, বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন, মহিলা বিষয়ক অধিদফতর, জাতীয় মহিলা সংস্থা, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, স্মল অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন ব্যবসায়িক চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন, নারী উদ্যোক্তা চেম্বার বা অ্যাসোসিয়েশনসহ অনুরূপ সংস্থার সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।
পরিপত্রে আরো বলা হয়েছে, ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক ঋণ কার্যক্রমের অতিরিক্ত হিসেবে সকল ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শাখা কর্তৃক নির্বাচিত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত তিনজন নতুন নারী উদ্যোক্তার মধ্য থেকে প্রতিবছর ন্যূনতম একজনকে কুটির, মাইক্রো অথবা ক্ষুদ্র খাতে ঋণ প্রদান করতে হবে। এ সংখ্যা আরো বেশি হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক প্রশংসিত হবে।
এ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে প্রয়োজনে নারী উদ্যোক্তাদের গ্রুপ ভিত্তিতেও ঋণ যাবে। উদ্যোক্তাদের অন্যান্য আর্থিক সেবার চাহিদা পূরণের বিষয়েও ব্যাংক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
সরকারের পাশাপাশি আগামী ২০২০ সালের মধ্যে পাঁচ হাজার নারী উদ্যোক্তা তৈরি করতে ২১৮ কোটি টাকার একটি বড় পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ।
“পাঁচ হাজার নারী উদ্যোক্তা তৈরি ও তাদের মূলধারার ব্যবসায় আনতে প্রথম তিন বছর ৪৭ কোটি টাকা করে এবং পরের দু’বছর ৪২ কোটি ও ৩৫ কোটি টাকা প্রয়োজন পড়বে,” জানান সভাপতি সেলিমা আহমাদ।