লকডাউনে জীবন ঘরবন্দি। তাই ডিজিটাল লেনদেনে সাবলীল হওয়ার চেষ্টা করছেন বহু মানুষ। তা সে ফোন কিম্বা বিকাশে বিদ্যুতের বিল জমা করা হোক, কিংবা হোক বিমার প্রিমিয়াম দেওয়া। আবার প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, ব্যাঙ্কিং লেনদেন বা নেহাতই অবসর যাপনেও নেট-নির্ভরতা বেড়েছে। এই নেট-নির্ভরতাকে কাজে লাগিয়েই নানান রকম ফাঁদ পাতছে সাইবার অপরাধীরা। সেই ফাঁদ এড়িয়ে কী ভাবে নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন? প্রশ্নোত্তরের কাঠামোয় আজ সেটিই তুলে ধরার চেষ্টা করল এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশ।
প্রশ্ন: অনলাইনে ব্যাঙ্কের লেনদেন কী ভাবে?
• ব্যাঙ্কের নির্দিষ্ট নেট ব্যাঙ্কিং ওয়েবসাইটে গিয়েই লেনদেন করুন। মোবাইল থেকে নির্ভরযোগ্য ইউপিআই অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।
কী ভাবে ভুয়ো বা জালিয়াতির ওয়েবসাইট চিনবেন?
• অনেক সময়ে পরিচিত ওয়েবসাইটের মতো একই ধরনের সাইট তৈরি করা হয়। কিন্তু তাতে বানানের সামান্য অদলবদল থাকে। অতএব বানান খুঁটিয়ে দেখে নিন। লেনদেনের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের আগে ‘https://’ রয়েছে কি না দেখে নিন। এটা থাকলে তা লেনদেনের জন্য নির্ভরযোগ্য। শুধু ‘http’ থাকলে নয়।
ব্যাঙ্ক কি আর্থিক লেনদেন বা অন্য যে কোনও কাজের জন্য ফোনে অ্যাকাউন্ট নম্বর, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের তথ্য, পিন বা ওটিপি চায়?
• ব্যাঙ্ক কখনওই এই ধরনের তথ্য চায় না। ফোনে ব্যাঙ্ককর্মী পরিচয় দিয়ে কেউ ফোন করলে তাঁকে কোনও ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না।
অনেক সময়ে ই-মেল বা ফোনে ব্যাঙ্কের নাম করে মেসেজ আসে। তাতে কি ফাঁদ পাতা থাকতে পারে?
• হ্যাঁ, পারে। এই ধরনের যে কোনও মেসেজ খুঁটিয়ে পড়ুন। বহু সময়েই বানান ভুল বা ত্রুটি থাকে। কৌতূহলবশত লিঙ্কে আগেই ক্লিক করবেন না।
কেমন ধরনের টোপ দেয় জালিয়াতেরা?
• বেশিরভাগ সময়ে অ্যাকাউন্টে কয়েক হাজার পাউন্ড বা ডলার জমা পড়েছে বা মোটা অঙ্কের লটারি জিতেছেন বলে মেসেজ বা ই-মেল আসে। তার সঙ্গে একটি লিঙ্ক থাকে। সেখানে ক্লিক করলেই অজান্তে ম্যালওয়ার বা ভাইরাস কম্পিউটার অথবা মোবাইলে ঢুকে পড়বে এবং সব তথ্য চুরি হয়ে যাবে। লকডাউনের সময়ে স্বাস্থ্য দফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের নাম করেও মেল আসছে। খতিয়ে না-দেখে নেহাত কৌতূহলবশত অ্যাটাচমেন্ট বা লিঙ্ক খোলা উচিত নয়।
অনেক ক্ষেত্রে সিনেমা, বই বা গান ডাউনলোড করার জন্য একটি সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে বা ফর্ম ফিল আপ করতে বলা হয়। সেটা কি নিরাপদ?
• কোন ওয়েবসাইট থেকে আপনি বই, সিনেমা বা গান নিচ্ছেন সেটা আগে খতিয়ে দেখা উচিত। ভুঁইফোড় কোনও জায়গায় ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না, বা কোনও সফটওয়্যার ডাউনলোড করবেন না। তাতে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে কি বিপদ ঘটতে পারে?
• সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধুত্বকে প্রাথমিক ভাবে ভার্চুয়াল জগতেই রাখুন। অচেনা বন্ধুকে ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না, বা আর্থিক লেনদেনে যুক্ত করবেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে তার পর টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। ঢাকাই এর আগে এমন বহু অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। অপরিচিত কোনও ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে ত্রাণের চাঁদা পাঠানোর ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকুন।
নিরাপদ আর্থিক লেনদেনের প্রাথমিক শর্তাবলি কী কী?
• এক, ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত তথ্য, ওটিপি কাউকে দেবেন না। দুই, কোনও রকম অযাচিত লাভ বা লটারি প্রাপ্তির ফাঁদে পা দেবেন না। তিন, অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে জড়াবেন না। চার, লেনদেন করার আগে বা কোনও ওয়েবসাইট, ই-মেলে লিঙ্ক খোলার আগে যাচাই করে নিন।