দক্ষিণ নরওয়ের বরফে ঢাকা পাহাড়। এই পাহাড়েই গবেষণার জন্য পৌঁছেছিল প্রত্নতত্ত্ববিদদের একটি দল। কিন্তু তাঁরা যেটা আবিষ্কার করলেন, গবেষণার উদ্দেশ্য সেটা ছিল না।
তাঁরা খুঁজে পেলেন বরফের তলার চাপা পড়া প্রায় দু’হাজার বছরের পুরনো জনপদ! এই পথ দিয়েই এক সময় মানুষের যাতায়াত ছিল। গত দু’হাজার বছর ধরে বরফের স্তূপের নীচে যা চাপা পড়ে গিয়েছিল।
সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ববিদ লারস হোলগার পাইলো এবং তাঁর দল এই জনপদটি খুঁজে পেয়েছেন। তাঁদের গবেষণা অ্যান্টিকুইটি নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
কী ভাবে বরফে ঢাকা এই জনপদের খোঁজ পেলেন তাঁরা? গবেষণার জন্য নরওয়ের অপল্যান্ডের দিকে যাচ্ছিল গবেষকদের দল। নরওয়ের লেন্ডব্রিনে তাঁবু ফেলেন তাঁরা।
সেই জায়গাতেই বহু প্রাচীন ঘোড়ার মল দেখতে পান তাঁরা। গবেষণায় জানতে পারেন, ঘোড়ার ওই মল অন্তত এক হাজার বছরের পুরনো। এই এলাকায় এত পুরনো ঘোড়ার মল দেখে কিছুটা আশ্চর্য হয়েছিলেন তাঁরা।
বিস্ময়ের জেরেই চারপাশে খুঁজতে শুরু করেন তাঁরা। এ বার ওই জায়গা থেকেই একটি জামার টুকরো খুঁজে পান। উলের তৈরি ছিল জামাটি, যার বয়স অন্তত এক হাজার আটশো বছর।
ঠিক কী ঘটেছিল এই জায়গায় তা জানতেই গবেষণা শুরু হয় তাঁদের। চারিদিকে ছড়িয়ে গিয়ে খোঁজ শুরু করে সেই দল।
বিভিন্ন রকমের জিনিস উদ্ধার করতে শুরু করেন তাঁরা। প্রায় এক হাজার রকমের বহু পুরনো জিনিস উদ্ধার করেন তাঁরা।
বরফে ঢাকা এ রকম একটা নির্জন জায়গায় কোথা থেকে এল এই জিনিসপত্র? প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে ছিল উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্রেই।
গবেষণায় জানা যায়, এগুলো এত দিন ধরে বরফের নীচে ঢাকা পড়ে ছিল। সূর্যের রোদও তাদের কাছে পৌঁছয়নি।
উষ্ণায়নের ফলে বরফের স্তর গলে যাওয়ায় এত বছর পর সেগুলো ফের উপরে উঠে এসেছে।
প্রত্নতত্ত্ববিদ পাইলো জানিয়েছেন, বরফে ঢাকা এই অঞ্চল এক সময় জনপদ হিসাবে ব্যবহার করতেন মানুষ। এই পথ দিয়েই যাতায়াত ছিল তাঁদের। কিন্তু ক্রমে রাস্তা পুরোটাই বরফে ঢাকা পড়ে যাওযায় যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়।
যাতায়াতের পথেই সম্ভবত এই সমস্ত জিনিস ফেলে দিয়েছিলেন তাঁরা। এগুলো ছিল তাঁদের পরিত্যক্ত জিনিসপত্র। সেগুলোই এত বছর পর উপরে উঠে এসেছে।
খুঁজে পাওয়া পুরনো জিনিসগুলোর মধ্যে প্রত্নতত্ত্ববিদ পাইলোর সবচেয়ে পছন্দের আবিষ্কার ছোট একটি কাঠের টুকরো। কী কাজে এই কাঠের টুকরো লাগত?
পাইলো জানিয়েছেন, গবাদি পশুদের বাছুর যাতে মায়ের দুধ খেতে না পারে, সে জন্য এই কাঠের টুকরোটি ব্যবহার করতেন সে যুগের মানুষ।