মঙ্গলবার লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণার দিনেই বান্দ্রায় ভিড় জমিয়েছিলেন বাড়ি ফিরতে মরিয়া কয়েক হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। যাঁদের অনেকে এ রাজ্যের। এর আগে একই ধরনের ঘটনার সাক্ষী থেকেছে দিল্লির আনন্দ বিহার। ক্ষুব্ধ কর্মীরা আগুন ধরিয়েছেন দিল্লির কাশ্মীরি গেটের ত্রাণ শিবিরে। বিক্ষোভের আঁচ সুরাতেও।
সুযোগ থাকতেও বাড়ি ফেরার সময় না-পাওয়ার মাসুল প্রতিদিন গুনছেন ত্রাণ শিবিরে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকরা। খাবার, জল, ওষুধ তো বটেই, অভাব মাথা গোঁজার জায়গারও। ‘বাড়তি পাওনা’ লাঞ্ছনা। এ থেকে মুক্তি পেতেই তাঁরা বাড়ি ফিরতে এত মরিয়া বলে একাধিক সর্বভারতীয় কর্মী সংগঠনের দাবি। এই পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে রেশন কার্ড দেওয়ার দাবি করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী।
কর্মী সংগঠনগুলির অভিযোগ, চরম দুর্দশায় পড়া এই কর্মীদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী, অধিকাংশ মুখ্যমন্ত্রীর সহমর্মিতা শুধু মুখে। নির্দেশিকা জারি করেই খালাস প্রশাসন। কর্মী সংগঠনগুলির মতে, দিল্লির আনন্দ বিহার বাস টার্মিনাস থেকে মুম্বইয়ের বান্দ্রা, করোনা-নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে সর্বত্র বাড়ি ফিরতে আকূল পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড় আসলে সরকারের প্রতি বিশ্বাসভঙ্গের প্রতিফলন। সঙ্ঘের কর্মী সংগঠন বিএমএসের সাধারণ সম্পাদক ব্রিজেশ উপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে উস্কে দিয়েই বারবার এমন কাণ্ড ঘটাচ্ছে দেশবিরোধী শক্তি।
পায়ে হেঁটেই কয়েকশো কিলোমিটার দূরের বাড়িতে পৌঁছতে এই পরিযায়ী শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসার পরে, বিভিন্ন রাজ্যের ত্রাণ শিবিরে তাঁদের রাখার বন্দোবস্ত হয়েছে। কিন্তু সংগঠনগুলির দাবি, সেখানে আটকে থাকা প্রায় ২০ লক্ষ শ্রমিকের দুর্দশা চরমে। কোথাও কোনওক্রমে আধপেটা খাবার জুটছে, তো কোথাও জলের সঙ্কট। কোথাও বাচ্চার দুধ নেই, তো কোথাও অমিল ওষুধ। রাহুল গাঁধীর বক্তব্য, ‘‘লকডাউনের ফলে যাঁরা খাবার পাচ্ছেন না তাঁদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে রেশন কার্ড দিতে সরকারকে অনুরোধ করছি। লক্ষ লক্ষ মানুষ কার্ডের অভাবে রেশন পাচ্ছেন না। অথচ গুদামে শস্য পচছে। অমানবিক পরিস্থিতি।’’
সিটু-র তপন সেনের অভিযোগ, লকডাউনের গোড়া থেকেই কাউকে কাজ থেকে ছাঁটাই না-করার আর্জি জানিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করেছে তাঁর সরকার। কিন্তু তা থেকে গিয়েছে খাতায়-কলমেই। প্রতি দিন ছাঁটাইয়ের অভিযোগ আসছে অজস্র।
শুধু তা-ই নয়। করোনা সংক্রমণ রুখতে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরা আটকানোর জন্য সমস্ত রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, ওই কর্মীদের জন্য খাবার, আশ্রয় ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে। দেখতে হবে, যাতে বাড়ির মালিক বাড়িছাড়া না-করেন। তপনের দাবি, “শুধু নির্দেশিকায় যে কাজ হবে না, বরং বিষয়টি কার্যকর করতে উপযুক্ত ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি প্রয়োজন, তা জানিয়ে তখনই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রায় সমস্ত সরকার শুধু আশ্বাস দিয়েই খালাস।” সবের উপরে ওই কর্মীদের যে ভাবে কখনও লাঠির মুখে পড়তে হচ্ছে কিংবা কখনও হাঁটু মুড়ে বসতে হচ্ছে জীবাণুনাশক স্প্রে-র সামনে, তা তাঁদের পক্ষে চরম অপমানজনক বলেও কর্মী সংগঠনগুলির দাবি।