করোনা প্রভাব ফেলেছে মনে আর মননে। প্রভাব ফেলেছে সমাজে আর সামাজিক যোগাযোগে।
চলো একসাথে দূরে থাকি। বিশ্বাসে কাছাকাছি। দূরে দূরে কাছে থেকে। দেশটাকে ভালো রাখি।
সময় বদলে যাচ্ছে।এখন দূরে থেকে কাছে থাকার সময় এসে গেছে। আগের মতন দল বেধে চলাচলে দিন শেষ হতে চলেছে।
অফিস মিটিং, কনফারেন্স, সেমিনার সব কিছু এখন ফ্রেমে বন্ধি। কিছুদিন আগে বলা হতো কাছেই থাকুন। এখন বলা হচ্ছে দূরে দূরে কাছে থাকি।
সামাজিক যোগাযোগের এর প্রভাব তীব্র।শুভেচ্ছা জানানো প্যাটার্ন পালটে যাচ্ছে।
ফিরোজ খান্নুন ফারাজী নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন,
“শুভ নববর্ষ।সবাই ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সবাইকে নিরাপদে রাখুন।”
ওবায়দুল করিম ম্যাসেঞ্জারে লিখেছেন, “চোখের আড়ালে, মনের আড়াল নয়
সাক্ষাতে নেই, সৌহার্দ্যে আছি
দরজা বন্ধ, উৎসব নয়।শুভ নববর্ষ ”
মাকসুদা সুলতানা ঐক্য নববর্ষ নিয়ে লিখেছেন,
“প্রাণের নববর্ষ - ১৪২৭ ”
বাংলা নববর্ষ এলো
নতুন রুপে দেশে,
শোভাযাত্রা হবেনা আজ
চারুকলার বেশে!
ঢাক ঢোল আর বাঁশের বাঁশির
সুরের তালে তালে,
নাচবেনা আজ আগের মতো
প্রাণের আগল খুলে!
গাইবেনা কেউ বটের তলায়
নববর্ষের গান।
যে গান শুনে জুড়িয়ে যেতো
সারা বাংলার প্রাণ।
পান্তা ইলিশ হবে না আজ
মাটির খোরায় খাওয়া,
বাঙালি জাতির কৃষ্টি যেটা
জন্ম থেকে পাওয়া!
মেলায় ঘুরে কিনবে না কেউ
মাটির চুড়ি বালা,
ঘুঁচবে না আজ মৃৎ শিল্পীর
পেটে খিদের জ্বালা।
মন্ডা মিঠাই খৈ মুড়িতে
পাবেনা সেই স্বাদ,
বিশ্ব মহামারিতে সব
করেছে বরবাদ।
হাট বাজারের হালখাতা আজ
পুরনো থেকে যাবে,
লিখবে না কেউ নববর্ষে
কার কাছে কি পাবে!
দেনা পাওনার খেরোখাতায়
জমেছে আজ ধুলো,
বাঙালির সে সুখ যেন আজ
ওড়া শিমুল তুলো।
সবকিছু ঠিক থাকলে, এখন হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে রংতুলি হাতে দেখা যেত চারুকলার তরুণ, তরুণীদের। অন্যরা হয়তো ব্যস্ত থাকতেন শেষ মুহূর্তের মহড়ায়। মেয়েরা হয়তো লাল-সাদা শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে চুড়ি, দুল বা গলার মালা ঠিক করে রাখতেন। রাত পোহালেই তো উৎসব শুরু। পয়লা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ ১৪২৭। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপে বদলে গেছে সব।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি নির্দেশনায় বাংলা নববর্ষের সকল অনুষ্ঠানে জনসমাগম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। ঘরে বসে ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে’ পহেলা বৈশাখ উদযাপনের জন্য বলা হয়েছে সরকারের তরফ থেকে।
এমন অবস্থায় পহেলা বৈশাখকে ঘিরে প্রতিবছর যে রকম জমজমাট প্রস্তুতি থাকে, এবারে সে চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। যার একটি প্রভাব পড়েছে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বাজারের ওপর।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা।
নারায়ণগঞ্জের তাঁতিপল্লিতে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের আগে কারিগরদের দম ফেলার সময় হতো না। এবার তাদের হাতে কোন কাজ নেই।
একের পর এক অর্ডার বাতিল হওয়ায় মহাজনরাও বিপাকে পড়েছেন।
তারা না পারছেন ঋণ পরিশোধ করতে, না পারছেন ক্ষুদ্র তাঁতিদের মজুরি দিতে।
এদিকে পাইকাররা পুরানো অর্ডারের পণ্য নিতে না চাওয়ায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন এই তাঁতিরা।
তাঁতি মো. মনির হোসেন বলেন, “আগে এই সময় পঁচিশটা কাপড়ের অর্ডার থাকলেও লাখ টাকার উপ্রে ইনকাম ছিল। এখন যা চলতাসে এই রকম দুইমাস থাকলে আমার লাখ টাকার উপ্রে ক্ষতি হয়া যাবে।”
মি. হোসেনের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি দেশজ পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বড় ধরণের লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে।
ফ্যাশন হাউজ শৈলীর স্বত্বাধিকারী তাহমীনা শৈলী বুঝতে পারছেন না তিনি এবং তার মতো মাঝারি উদ্যোক্তারা কবে নাগাদ এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
“সুতা, রং, কারিগরদের অ্যাডভানস করা আছে। গ্রাফিক্সের কাজ, তারপর শোরুমের ইন্টেরিওর। এতো ইনভেস্ট করার পরে এখন কিছু বিক্রি করতে পারছি না। ফ্যাক্টরিতে ম্যাটেরিয়াল নষ্ট হচ্ছে। অনেক লস হয়ে গেছে।”
পহেলা বৈশাখের এই আয় থেকে সারাবছরের কর্ম পরিকল্পনা করে থাকেন মিসেস শৈলী।
তাই এবারের লোকসান সারা বছরব্যাপী বয়ে বেড়াতে হবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
“পহেলা বৈশাখে যে বিক্রি হয় এটার টাকা দিয়ে ছোট ছোট অন্য প্ল্যান করি। এখন বলতে গেলে সব বন্ধ হওয়ার অবস্থা। কি যে করবো বুঝতে পারছি না।” বলেন মিসেস শৈলী।