অলিভার আইজ্যাকস।কনটিবিউটর।টেক / ব্লকচেইন ইনফ্লুয়েন্সার, ইনভেস্টর ও এডভাইজার।
নেতৃত্বের উন্নয়ন এবং প্রযুক্তি নির্ভর হওয়া এই মহামারী থেকে বেঁচে থাকার কেবলমাত্র দুটি সমাধান।এখনি সময় নিজেকে এবং ব্যাবসার কৌশল বদলে নেবার।
এটি এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে যে করনা পরিস্থিতি ব্যবসা বানিজ্যে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব না ফেলে যাবে না এবং এর প্রভাব পড়বে সামগ্রিক ভাবে অর্থনৈতিতে। এর ছাড়া স্বাস্থ্য ঝুকিতো থাকছেই।
এই মুহুর্তে কেবল টিকে থাকার লড়াইয়ে মনোনিবেশ করা খুব বেশী দরকার, যখন আপনার ব্যবসা হুমকির মুখে তখন নিজের ভিতরের আগুনকে জ্বালিয়ে নেয়ার বিকল্প কিছু নাই,নেতৃত্বকে শানিয়ে তুলুন এবং আপনার ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা প্রস্তুত করুন। মনে রাখবেন করোনা পরবর্তী সময়ে জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
১. আগে থেকে ব্যবসা পরিচালনার কৌশল এবং কার্যকর কাস্টমার খুজে বের করুন।
ব্যবসাতে স্বাভাবিক অপারেশন বজায় রাখতে লড়াই করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের, এই সময়টিতে আপনার সম্ভাব্য গ্রাহকদের একটি নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি করার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এখন সময় এবং প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন ব্যবসা পরিচালনার নতুন কৌশল খুজে বের করার সাথে এটা নিশ্চত করুন আপনার সাথে প্রয়োজন সংখ্যক কার্যকর কাস্টমারের ভাল যোগাযোগ আছে, যাদের উপর আপনি নির্ভর করতে পারেন।
তদতিরিক্ত, ব্যবসা পরিচালনার নতুন কৌশল একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আপনার আস্থা বাড়াবে। যখন আপনার প্রতিযোগিতা সঙ্কটময় মূহুর্তের সাথে এবং যখন আপনি নতুন ক্লায়েন্ট খুঁজছেন, আপনার গ্রাহকদের দেখাতে চেষ্টা করুন যে আপনি এতকিছুর মধ্যেও শীর্ষে রয়েছেন।
২. আপনার পরিষেবাসমুহকে বর্তমান পরিস্থিতির উপযোগী করে নিন।
বিশ্বের অনেক জায়গায়, সাধারণ মানুষকে ঘরে বসে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যার ফলে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যদি আপনার সংস্থা বি ২ সি মডেলটি অনুসরণ করে এবং ক্লায়েন্টদের সাথে মুখোমুখি, ইন-স্টোর কথোপকথনের উপর নির্ভর করেন, পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘকালীন সময়ে মারাত্মক হুমকির মধ্যে ফেলবে আপনাকে।
তাই আপনার পরিসেবা বা পণ্যের সরবরাহ লাইন সৃষ্টিতে সৃজনশীল হোন এবং বুদ্ধিদীপ্ত বিভিন্ন উপায় খুজে বের করুন।
এর একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ হ’ল রেস্তোঁরা এবং ক্যাফেগুলি হোম-ডেলিভারি পরিচালনা করতে পারে কিম্বা বিনামূল্যে ডেলিভারি দিতে পারেন, ডিস্কাউন্ট দিতে পারেন, সাপ্তাহিক বা মাসিক সাবস্ক্রিপশন ডিল করতে পারেন এছাড়া অন্যান্য উত্সাহমূলক কর্ম কৌশলের আপনাকে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে সহায়তা করবে।
৩. করোন পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে আপনার বিপণন পরিকল্পনা সেট করুন।
করোনা সংকট মাথায় রেখে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন আপনার পণ্য বা পরিষেবা এই সময়ের সাথে প্রাসঙ্গিক কিনা এবং এটির সাথে সংগতি রেখে আপনার বিপণনকে অভিযোজিত করছেন কি না। বিশেষত যদি আপনি প্রাদুর্ভাবের সময়কালের জন্য পরিষেবার কৌশল চালু করতে পারেন, সেটি আপনাকে ভালো ফল দিবে।
এই মূহুর্তে বর্ধিত এবং নমনীয় বিপণন সংকটপূর্ন।ব্যাবসা বাড়ানো কঠিন হবে। অনেক মানুষ অবাক হবে এটা দেখে যে, ব্যবসা এখনও চলছে। নিশ্চিত করুন আপনার টার্গেট কাস্টমার জানেন যে আপনি উন্মুক্ত এবং এখনও শক্তিশালী হয়ে অবস্থান করছেন।
নিশ্চিত করুন আপনার পরিষেবাগুলি এখন এবং পরবর্তী সময়ের জন্যে প্রাসঙ্গিক। শুধু এটিই গুরুত্বপূর্ণ নয় যে,প্রাদুর্ভাবের সময় কীভাবে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা যাবে সেটি নিয়ে ভাবা বরং সাথে সাথে আগামীতে টিকে থাকার জন্য কৌশল উদ্ভাবন করাও জরুরী।
এটা ভাবার কোন অবকাশ নাই যে একবার করোনার হুমকি কেটে গেলে সবকিছু আগের অবস্থানে ফিরে যাবে।
বাড়িতে আবদ্ধ থাকার কারনে অনেকে অনলাইনে কেনাকাটাকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন। এবং এটি ধরে নেওয়া উচিত নয় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে তারা যে সমাধানগুলি ব্যবহার করেছিল সেগুলিতে ফিরে যাবে।
ধরা যাক আপনি সরাসরি গ্রাহকদের কাছে বি ২ সি অথবা বি ২ বি আর্থিক পরিষেবা সরবরাহ করছেন। এখন অবধি, গ্রাহকরা আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারনে, নির্ভরযোগ্যতা এবং সুরক্ষার জন্য স্বয়ংক্রিয় সমাধানগুলির পাশ কাটিয়ে আপনাকে বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু দীর্ঘা হোম-কোয়ারেন্টাইনের সময়ে, গ্রাহকরা স্বয়ংক্রিয় এবং অন লাইন পরিষেবাগুলিতে শিফট করে যেতে পারে এক সময়।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর, স্বয়ংক্রিয় সমাধান ব্যবস্থাপনা ব্যবহারকারী সংস্থাগুলি এগিয়ে থকবে। এগুলি তাদের আরও সফল হতে সহযোগিতা করবে, এবং আপনার গ্রাহক কমে যেতে থাকবে। এ কারণেই আপনার পরিসেবাদি এমনভাবে খাপ খাওয়ানো জরুরি যাতে শুধু প্রাদুর্ভাবের সময়ই এগুলি কার্যকর থাকবে তাই নয়, সব কিছু শান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও তা যেনো ক্রেতা আটকে রাখতে পারে সে দিকে নজর দেয়া জরুরী ।
৪. আপনার ব্যবসায়ের চ্যালেঞ্জগুলি শনাক্ত করুন।
উপরোক্ত সমস্ত পয়েন্ট কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য, একটি ভাল সূচনা হ’ল আপনার ব্যবসায়ের চ্যালেঞ্জগুলির একটি তালিকা প্রস্তত করা।এটি ভাবার কোন অবকাশ নাই যে একবার জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি কেটে গেলে ব্যবসা বানিজ্য আগের অবস্থানে ফিরে যাবে।
৫. বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য কৌশল তৈরি করা এবং প্রতিটি সম্ভাবনা বিবেচনায় নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
সরবরাহ শৃঙ্খলা ব্যাহত হওয়া থেকে শুরু করে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অসুবিধা পর্যন্ত সব কিছু বিবেচনা করুন, গ্রাহক সৃষ্টি করুন এবং অন্যান্য ব্যবসায়ের সাথে প্রতিযোগিতা তৈরি করুন।
ভাবুন যে মহামারীটি কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এবং কীভাবে এটি আপনাকে প্রভাবিত করতে পারে, সব থেকে খারাপ পরিস্থিতি কি হতে পারে, সেটি সহ প্রতিটি বিষয়ের সামনে রেখে পরিকল্পনা করুন।
৬. বেশ কয়েকটি পরিস্থিতি মাথায় রেখে সমাধানের পরিকল্পনা করুন।
আপনার চ্যালেঞ্জগুলির তালিকা একবার হয়ে গেলে, প্রত্যেকের জন্য বেশ কয়েকটি করে সমাধান খুজে বের করুন। সঠিকভাবে অনুধাবন করা অসম্ভব ঠিক কী হতে চলেছে, তাই অজানা এবং অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটনা্র সম্মুখিন না হওয়ার চেয়ে আগে থেকে প্রস্তুতি এবং কৌশল অবলম্বন করা ভাল।
৭. প্রতিদিনের কার্যক্রম বজায় রাখতে বিকল্প সমাধানগুলি ব্যবহার করুন।
যদি ইতিমধ্যে এটি না করে থাকেন তবে করোনভাইরাস সম্ভবত আপনার ভ্রমণের ব্যবস্থা, যোগাযোগ, কর্মচারী এবং এমনকি সরবরাহের চেইনগুলি ব্যাহত করবে।
ব্যবসায়ের পরিকল্পনা, ইভেন্ট এবং ট্রিপগুলি কেবল বাতিল করার পরিবর্তে ব্রেইনস্টর্মিং- এর মাধ্যমে সমাধান খুজুন।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার অফিস বা উত্পাদন ক্ষেত্রের কোনো পরিদর্শনের প্রয়োজন হয় – যেখানে আপনার কো্নো সম্ভাব্য গ্রাহকের ভিজিট করাতে চাচ্ছেন -কিন্তু তারা বর্তমানের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভিজিটে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন।এক্ষেত্রে তাদের একটি বিকল্প ব্যবস্থা অফার করুন, যেমন ফেসটাইম মিটিং বা যদি তাদের ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য থাকে আপনার নির্দিষ্ট স্থানটি সরাসরি দেখা,তাহলে তাকে রেকর্ডকৃত ফুটেজ পাঠান।
৮. যোগাযোগ প্রবাহ ঠিক রাখতে প্রযুক্তির আপগ্রেড প্রয়োগ করুন।
কোন কোন ক্ষেত্রে আপনার কর্মী বাড়ি থেকে কাজ করছে, এসব ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব দক্ষতার সাথে কীভাবে যোগাযোগ নিশ্চিত করা যায় তার পরিকল্পনা করা জরুরী। ফোন কল এবং চ্যাটগুলি যথেষ্ট দ্রুত হবে না, বিশেষত হোম-লাইফের নানাবিধ সমস্যা যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
আপনার পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়নের জন্য, অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহারকে বিবেচনা করুন, google dox সবাই সম্পাদনা করতে এবং মন্তব্য করতে পারে, ব্যবসায় পরিকল্পনার জন্য Asana বা অনুরূপ সফ্টওয়্যার যা সবাইকে একই পৃষ্ঠায় রেখে কাজ করতে সহযোগিতা করবে, এছাড়া Coggle বা Stormboard ব্রেইন স্টর্মিং ও ফাইল শেয়ারে জন্যে খুব কার্যকরী সমাধান।
এগুলি এখনই ইউজ করা শুরু করতে পারেন, যাতে সবচেয়ে খারাপ সময়ে এবং প্রত্যেকেই বাড়ি থেকে কাজ করাতে পারে এবং যোগাযোগের নতুন পদ্ধতিতে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে।
কীভাবে কখন এই পরিস্থিতি থেক মুক্তি আসবে, বলা কঠিন। কিছু সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে আবার বছর ধরে বিশ্বব্যাপী মন্দার মুখোমুখি থাকতে পারে। সকল ধরণের ব্যবসায়ের জন্য, হাল ছেড়ে না দেওয়া, স্থিতিশীল কৌশল অবলম্বন করা এবং সফল থাকার জন্য অভিযোজ্য এবং নমনীয় হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।