জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমালয়ের তাপমাত্রা বাড়ছে৷ ফলে জমাট বাধতে পারছে না পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের হিমবাহগুলো৷ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হিমালয় থেকে নেমে আসা নদীগুলো৷
নদীগুলোর ওপর নির্ভর করছে তিনশ’ কোটি মানুষের পানির জোগান৷
মধ্য-নভেম্বরের এই সময়টায় হিমালয়ের পশ্চিমাংশের পর্বতগুলো বরফে ঢাকা থাকার কথা৷ অথচ দেখা গেছে, এখন এখানকার তাপমাত্রা অনেক বেশি, এগার ডিগ্রি সেলসিয়াস৷
গেল ত্রিশ বছর ধরে হিন্দু যোগী স্বামী ধর্মানন্দ এখানে থাকেন৷ পরিবর্তনগুলো নিজের চোখে দেখেছেন তিনি৷
‘‘১৯৯০ সাল যখন আমি এখানে প্রথমবার আসি, তখন আরো একশ মিটার নীচে হিমবাহ ছিল৷ এর মুখটাই ছিল অনেক নীচে৷ পুরো নদী বরফের চাদরে ঢাকা থাকত৷ যে কোন সময় পার হওয়া যেত৷ কখনো গলত না৷ এখনো পুরোনো ব্রিটিশ মানচিত্রে বরফের তীর দেখা যায়৷ এখন আর এসব নেই৷ সব শেষ,” বলেন তিনি৷
পিন্ডারি হিমবাহে বরফের আস্তরণ খুব বেশি চোখে পড়েনা৷ নদীর ওপর বরফের আবরণ নেই৷ এমনকি নদীর পানির উৎসই এখন হুমকির মুখে৷
ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট অফ হিমালয়ান জিওলজির হিমবাহ বিশেষজ্ঞ ড. ডিপি ডোবহাল এ নিয়ে কাজ করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আজ এই হিমবাহটির দৈর্ঘ্য পাঁচ কিলোমিটার৷ পর্বতের খাড়া ঢালের পাথুরে গায়ের মাঝে এটি আটকে আছে৷ বেশি খাড়া হবার কারণে এই বরফ গলার হারও বেশি৷ হিমবাহ জড়ো হবার জায়গাও কমে গেছে৷ এখন শীতকালে খুব অল্পই বরফ জমে৷”
তিন হাজার আটশ’ মিটার ওপরে বরফ নেই বললেই চলে৷ অন্য হিমবাহগুলোও সমান্তরাল ট্র্যাকে৷ গত একশ’ বছরে গাঙ্গোত্রী, যেখান থেকে হিন্দুদের পবিত্র নদী গঙ্গার উৎপত্তি, তা অর্ধেক বরফ হারিয়েছে৷
ড. ডোবহালের ভাষায়, ‘‘আগে তুষারপাত শুরু হত সেপ্টেম্বরের শেষে অথবা অক্টোবরের শুরুতে৷ নিয়মিত বিরতিতে বেশ অনেকখানি তুষার পড়ত৷ তুষারগুলো জমে বরফ হতে যথেষ্ট সময়ও পেত৷ কিন্তু এখন অক্টোবর-নভেম্বরেই বরফ গলতে থাকে৷”
এখানে বৃষ্টিপাতের ধরনও বদলে গেছে৷ এতেও ক্ষতি হচ্ছে অনেক৷
ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউটের গবেষকরা দূষণের মাত্রা বেড়ে যাবার বিষয়েও সতর্ক করছেন৷ কাছাকাছি অবকাঠামো নির্মাণাধীন এলাকা থেকে প্রচুর ধূলা এসে পড়ায়, বরফ আগের মতো ৯৭ থেকে ৯৮ ভাগ সূর্যকিরণ প্রতিফলিত করতে পারছে না৷
‘‘ধূলিকণাগুলো হিমবাহ পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে৷ ফলে এখন আর বরফরের স্তরগুলোকে আগের মতো সাদা মনে হয় না,” বলেন ডোবহাল৷ ‘‘এই ধূলিকণা খুবই বিপদজনক৷ এরা তাপ শুষে নেয় এবং বরফ খুব দ্রুত গলতে বাধ্য করে৷ ধূলির স্তর এক থেকে দুই মিলিমিটারের বেশি হবে না৷ কিন্তু এটি বরফ গলার হার বাড়িয়ে দেয়৷”
এই পরিবর্তনগুলো পর্বতমালার ইকোসিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে৷
স্বামী ধর্মানন্দ জানান যে, এখানে নতুন নতুন প্রজাতির দেখা পাওয়া যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘গত বছর মশা দেখা গেছে৷ বিছানার পোকাও পেয়েছি আমি৷ নতুন নতুন জীব বেরিয়ে আসছে৷ ছয় কিলোমিটার নীচে জোঁকও পাওয়া যাচ্ছে৷ আর তের কিলোমিটার নীচে নদীতীরে সাপও পাওয়া গেছে৷ বিশ ত্রিশ বছর আগে এগুলোর কোনোটিই ছিল না এখানে৷”
বিজ্ঞানীরা বলেন, এই হারে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ হিমালয়ের সব হিমবাহ গলে যাবে৷ এতে এশিয়ার তিনটি প্রধান নদী ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ প্রায় তিনশ কোটি মানুষ পানির জন্য হিমবাহের ওপর নির্ভরশীল৷ তাই পৃথিবীর সর্বোচ্চ এই পর্বতশৃঙ্গের হিমবাহ বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে৷ প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ৷