ক্যালিফোর্নিয়ার জ্যাসন গার্সিয়া নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও প্রাণঘাতী এ রোগ তাকে হারাতে পারেনি। তিনি এখন সুস্থ-সবল মানুষ। সেই গার্সিয়াই এখন নিজের রক্তরস দান করে অন্যদের জীবন বাঁচানোর নতুন লড়াইয়ে নেমেছেন।
গার্সিয়া গত ৬ মার্চ লক্ষ করেন তার হালকা কাশি দেখা দিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার এসকোনদিদোর বাসিন্দা ৩৬ বছর বয়সী এ মহাকাশ প্রকৌশলী অবশ্য বুঝতে পারেননি ব্যাপার এতটা গুরুতর কিছু। কিন্তু কাজে বের হওয়ার পর তিনি কাশির সঙ্গে মাথা ঘোরানোর বিষয়টিও টের পান। একদিনের মধ্যে তার জ্বরও আসে এবং শরীরে ব্যথা খুব দ্রুত আসা-যাওয়া করছিল। এরপর শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যার মুখে পড়েন।
ব্যক্তিগত চিকিৎসককে ডাকার পর উপসর্গ দেখে তাকে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। হাসপাতালে পরীক্ষার পর তাকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং ১৪ মার্চ জানানো হয় তিনি কভিড-১৯-এ পজিটিভ। গার্সিয়া বলেন, ‘তারা আলাদা থাকতে বলেন। আমি সেটাই করেছি।’
প্রায় ১০ দিন বাসায় আলাদা থেকেছেন তিনি। এ সময় বাসায় বসেই খানিকটা অফিসের কাজ সেরেছেন, বড়জোর গেস্টরুম পর্যন্ত গিয়েছেন। এ সময় নৌবাহিনীতে চাকরিরত স্ত্রী ও ১১ মাস বয়সী কন্যার কাছ থেকেও দূরে থাকেন।
সুস্থ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গার্সিয়া লিখেছেন, ‘মরণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমি বিজয়ী হয়েছি। কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে আমি বিজয়ী হয়েছি।’
ঠিক একই সময়ে অরেঞ্জ কাউন্টির সেন্ট জোসেফ হাসপাতাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে বাঁচাতে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগের জন্য তারা এমন ব্যক্তিকে খুঁজছেন, যিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন ও সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গার্সিয়ার এক বন্ধু দুটি পোস্টই লক্ষ করেন এবং একটি সময় হাসপাতাল থেকে গার্সিয়াকে ফোন করা হয়, যখন তার কোয়ারেন্টিনের সময় শেষ হয়েছে।
একজন মুমূর্ষ রোগীকে বাঁচাতে হাসপাতাল থেকে গার্সিয়ার কাছে রক্তরস চাওয়া হয়, যে রোগী অন্য কোনো চিকিৎসাতেই সাড়া দিচ্ছেন না। গার্সিয়া সানন্দে ‘হ্যাঁ’ বললেন। তার কথায়, ‘এটা ছিল একজনের জীবন বাঁচানোর সুযোগ, যে মানুষটি রোগটির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারছিলেন না।’
তিনজন রোগীর জন্য ১ এপ্রিল রক্তরস দান করেন গার্সিয়া। গত রোববার চিকিৎসকরা তাকে জানান, তার রক্তরস তিন রোগীর শরীরেই দেয়া হয়েছে এবং গুরুতর অবস্থায় থাকায় সেই রোগীটি ধীরে ধীরে প্রতিদিন সুস্থ হয়ে উঠছেন।
গার্সিয়া এখন সুখী এক মানুষ। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘যখন আমার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলো, তখন আতঙ্ক আর ভয়ের অনুভূতি পেয়ে বসল, কারণ এটা ছিল পজিটিভ। এর সমাপ্তি ঘটছে সম্ভবত অন্য কারো জীবন বাঁচানোর মধ্য দিয়ে।’
নিজে কীভাবে সংক্রমিত হয়েছেন সে ব্যাপারে ধারণা নেই গার্সিয়ার। কিন্তু ভ্যাকসিন তৈরির আগে এ রোগের চিকিৎসায় অবদান রাখতে পেরে তিনি আনন্দিত। ৩৬ বছর বয়সী গার্সিয়া বলেন, ‘এটা যদি কাজ করে, তবে কিছু মানুষের হূদয়ের যন্ত্রণা লাঘবের দারুণ এক সুযোগ তৈরি হতে পারে, যারা জীবন বাঁচাতে লড়াই করছেন।’
সিএনএন