চলমান বৈশ্বিক সংকটের এ মুহূর্তে ধীরে ধীরে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো অতিরিক্ত ঋণভার বহন করতে অনিচ্ছুক বা অপারগ। ১৯৩০-এর দশকের পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছে ব্রিটিশ অর্থনীতি। এ মুহূর্তে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে শতকোটি পাউন্ডের ঋণ সরবরাহের চেষ্টা করছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নেতৃত্বাধীন সরকার। ব্রিটিশ অর্থনীতির সংকট জোগানে নয়, বরং চাহিদায়। খবর বিবিসি।
প্রথমত, ক্রেতাদের চাহিদা। গ্রোসারি বাদে কেউই আসলে কোনো পণ্য ক্রয় করছেন না। নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বেশি রয়েছে এবং অনলাইনে অনেক অর্ডার আসছে, কিন্তু যুক্তরাজ্যের সেবা খাতটি বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। অনেক দোকান, রেস্তোরাঁ, বার, হেয়ারড্রেসার, পোষা প্রাণীর দোকান, গার্ডেন সেন্টারগুলো আসন্ন বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে।
দ্বিতীয়ত, ঋণ চাহিদা। চলমান পরিস্থিতি মাথায় রেখে কবে তা স্বাভাবিক হবে, এ বিষয়ে অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ঋণে জর্জরিত হতে চাইছে না ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো। সরকার অবশ্য চেষ্টা করছে ব্যাংকগুলো যাতে ব্যক্তিগত কোনো গ্যারান্টি ছাড়াই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আড়াই লাখ পাউন্ড পর্যন্ত যেন ঋণ দেয়। এর অতিরিক্ত ঋণের ২০ শতাংশের জন্য গ্যারান্টি প্রযোজ্য হবে, বাকি ৮০ শতাংশ ঋণের গ্যারান্টি সরকারের।
সরকার আসলে ঋণগ্রহীতা নয়, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ৮০ শতাংশ ঋণের গ্যারান্টি দিচ্ছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ গ্রহণ করবে, তাদের শতভাগ ঋণই শোধ করতে হবে। তবে তারা ১২ মাসের ডেফারেল পাবে কিন্তু হলিডে নয়। তার মানে হচ্ছে, ঋণগ্রহীতাকে অবশ্যই তার ঋণ ও সুদ পরিশোধ করতে হবে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি রক্ষায় এ তিনটি আইডিয়া কাজ করতে পারে:
১. ব্যাংকঋণের সুদহার স্থগিত নয়, মওকুফ করুন
ব্যাংকগুলোর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সুদহার স্থায়ীভাবে মওকুফ করা উচিত। ১১ বছর আগে শতকোটি ডলার আর্থিক সহায়তা পেয়েছিল যুক্তরাজ্যের ব্যাংকগুলো। বছরের বাকি অংশে লভ্যাংশ প্রদান বন্ধের নির্দেশ দিয়ে সরকার অত্যন্ত কার্যকর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর হাতে চলতি পঞ্জিকাবর্ষে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি পাউন্ড অতিরিক্ত মূলধন থাকছে। কী পরিমাণ মূলধন রাখতে হবে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড কর্তৃক নীতিমালা শিথিল করার কারণে প্রধান ব্যাংকগুলোর মূলধন পরিস্থিতি নিরাপদ রয়েছে। ব্যাংকগুলো অবশ্যই সুদহার মওকুফের বিষয়টি কার্যকর করতে পারে।
২. ব্রিটিশ ব্যাংকগুলো যেখানে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ সুদহারে যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ সংগ্রহ করতে পারছে এবং ৮০ শতাংশ ঋণের গ্যারান্টি দিচ্ছে, সরকারের সেখানে হাই স্ট্রিটের ব্যাংকগুলোর ৮ শতাংশ সুদ প্রত্যাশা অস্বাভাবিক। সরকার এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে সংকট শেষে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ওই সুদহার দিতে সক্ষম হলে তবেই তা নেয়া যাবে।
৩. যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন কিংবা বছরান্তে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে, তাদেরকে সরকারের যেকোনো বেইলআউটের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। চলমান সংকটেও যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদান করে সরকারের কাছে আবার নগদ অর্থ সাহায্য কামনা করে, তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য মনে করছে অনেকেই। কিন্তু এ রকম কয়েকটি মজার ঘটনাই ঘটেছে।
পিঅ্যান্ডও ফেরিজ বলছে, গুরুত্বপূর্ণ ফেরি ক্রসিং নিশ্চিতে তাদের সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। অথচ দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ডের মালিকানাধীন পিঅ্যান্ডও আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের ২৭ কোটি পাউন্ড লভ্যাংশ দিতে যাচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে ইজিজেট তার শেয়ারহোল্ডারদের হাতে ১৭ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড লভ্যাংশ হস্তান্তরের পর এখন সরকারি সহায়তা চাইছে। যদিও উড়োজাহাজ সংস্থাটি জোর দিয়ে বলছে, তারা সরকারের বেইলআউট নয়, ঋণ সহায়তা চাইছে।