উত্তরপ্রদেশের এক গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছিল সে। প্রথম দিকে নাম করেছিল কুস্তি নিয়ে। কিন্তু পরে সেই কুস্তিগিরই হয়ে ওঠে মাফিয়া। সারা উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার তার ত্রাসে কাঁপতে শুরু করে।
তার নাম প্রকাশ শুক্ল। মাত্র ২৫ বছর বয়সে এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় তার। কী ভাবে মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে থেকে মাফিয়া হয়ে উঠল?
১৯৭৩ সালে গোরক্ষপুরের হাতা বাজারের কাছে মামখোর গ্রামে জন্ম প্রকাশ শুক্লর। প্রথম থেকেই গ্রামে তাকে সবাই চিনতেন। কারণ গ্রামের আখড়ার একজন জনপ্রিয় কুস্তিগির ছিল সে।
কুস্তি খেলতে ভালবাসত ঠিকই। যদিও পেশা হিসাবে কুস্তিকে বেছে নেয়নি সে। বরং হাতে তুলে নিয়েছিল আগ্নেয়াস্ত্র। আর সেই আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে যখন তখন যে কারও উপরে গুলি চালিয়ে দিতে হাত কাঁপত না তার।
খুব ছোট বয়স থেকেই অপরাধে হাত পাকিয়েছিল শুক্ল। তার জীবনের প্রথম অপরাধ শুরুই হয়েছিল খুন দিয়ে।
শুক্লর তখন সবে ১৭ বছর বয়স। ১৯৯৩ সাল। রাকেশ তিওয়ারি নামে এক ব্যক্তিকে খুন করেছিল সে। ওই গ্রামেরই ছেলে রাকেশ তার বোনকে কুইঙ্গিত করেছিল বলে অভিযোগ। সে কারণেই শুক্লর হাতে খুন হতে হয়েছিল তাকে।
এর পর প্রাণে বাঁচতে শুক্ল ব্যাঙ্কক পালিয়ে যায়। কয়েক বছর পর যখন ফিরে আসে, তখন বড় মাফিয়া হয়ে উঠেছিল। বিহারের মাফিয়া সুরজ ভানের খাস লোক হয়ে উঠেছিল সে।
বেশি দিন অন্য কারও ছায়াসঙ্গী হয়ে কাটাতে হয়নি তাকে। নিজেই এক সময় উত্তরপ্রদেশ আর বিহারের ত্রাস হয়ে ওঠে। এমনকি রাজনীতিবিদরাও প্রাণভয়ে থাকতেন ওই সময়।
১৯৯৭ সালে লখনউয়ের বীরেন্দ্র শাহি নামে এক রাজনৈতিক নেতাকে খুন করে শুক্ল। এমনকি বীরেন্দ্র শাহির বিরোধী নেতা হরিশঙ্কর তিওয়ারিকেও খুনের ছক কষে ফেলেছিল সে।
জানা যায়, ওই সময় শুক্ল এই দুই বিরোধী নেতাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে নিজে ওই এলাকায় ভোটে দাঁড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হয়নি।
কারণ পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় তত দিনে শুক্লর নাম উঠে গিয়েছিল। তাকে ধরার জন্য উত্তরপ্রদেশ পুলিশ স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গঠন করে।
১৯৯৮ সালে শুক্লর গ্যাং এক ব্যবসায়ীর ছেলেকে অপহরণ করে। ওই ব্যবসায়ীর থেকে পাঁচ কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায় করে।
১৯৯৮ সালে সে হাসপাতালে ঢুকে চিকিত্সাধীন বিহারের মন্ত্রী বিহারি প্রসাদকেও খুন করে। এমনকি ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে তত্কালীন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংহকে খুনের সুপারিও নিয়েছিল সে।
১৯৯৮ সালে ২ সেপ্টেম্বর উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গাজিয়াবাদে শুক্লাকে এনকাউন্টার করে। তার মৃত্যুর সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের মাফিয়া রাজের একটা অধ্যায় শেষ হয়।