সকাল ৯টা। ৯ মিনিটের ভিডিয়ো। জানানো হল, রাত ৯টার সময় এবং ৯ মিনিট ধরে আলো জ্বালাতে হবে। এত ‘৯’ কি নেহাতই কাকতালীয়? নাকি সব কিছু ছক কষেই বার্তা দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী? আপাতত এই চর্চাতেই মশগুল সোশ্যাল মিডিয়া। শুধু এই চারটেই নয়, নয় নয় করে অন্তত ডজনখানেক ‘৯’-এর অন্তমিল ‘আবিষ্কার’ করে ফেলেছেন নেটাগরিকরা। জ্যোতিষবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত থেকে সংখ্যাতত্ত্ব, মায় রাজনীতির খোঁচা পর্যন্ত— সব হিসেব কষে নেটাগরিকরা বুঝিয়েছেন, আকবরের ‘নব’রত্নের চেয়ে তাঁরাও কম যান না।
শুক্রবার সকাল ৯টায় মোদী যখন ঘোষণা করেছেন, তখন হয়তো নেহাতই ‘জনতা কার্ফু’র দিন বিভিন্ন জিনিস বাজিয়ে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের কুর্নিশ করার বার্তার মতোই মনে হয়েছিল দেশবাসীর। কিন্তু তাঁর ভাষণ শেষ হওয়ার খানিক ক্ষণের মধ্যেই প্রথম বেরিয়ে আসে ওই প্রথম চারটি ৯-এর তত্ত্ব। তার পর সময় যত গড়িয়েছে, যোগ হয়েছে ‘নব’ ‘নব’ সমীকরণ।
উঠে এসেছে জটিল গণিত-তত্বও। প্রদীপ, টর্চ জ্বালানোর দিন হিসেবে বলা হয়েছে ৫ এপ্রিল। আর ইংরেজি ক্যালেন্ডারের কত নম্বর মাস এটা? চতুর্থ, মানে চার। তা হলে ৫ যোগ ৪ যে নয়, সেটা তো যে কেউ বলে দেবেন। কিন্তু এত গভীরে গিয়ে ভাবনাটা যে আবিষ্কার করেছেন, তাঁর প্রতিভার কৃতিত্ব দিতেই হয়।
আমাদের পৃথিবী মিলিয়ে মহাকাশে নবগ্রহ। অর্থাৎ ন’টি গ্রহ। বুধ থেকে শুরু করে প্লুটো পর্যন্ত এই ৯ গ্রহের উদ্দেশে বার্তা দিতেই কি এই ৯ টার সময়, ৯ মিনিট ধরে আলো জ্বালাতে হবে? মোদীকে কটাক্ষের সুরে নেটিজেনরা বলছেন, ওই টর্চ, মোমবাতির আলোতে কি নয় গ্রহের কাছে জরুরি কোনও বার্তা পাঠাতে চাইছেন যে, ‘করোনা থেকে মুক্তি দাও’। নাকি ন’টি গ্রহের শক্তি দিয়ে পৃথিবীকে বাঁচানোর বার্তা দিতে চান? যেমন ভাবে দেবতাদের মিলিত শক্তিতে দেবী ‘চণ্ডী’র সৃষ্টি হয়েছিল এবং তিনি মহিষাসুর বধ করেছিলেন।
জ্যোতিষবিদ্যার ক্ষেত্রে আবার এই নবগ্রহই পাল্টে হয়েছে রাহু, কেতু, শনি, বুধ, মঙ্গল, বৃহস্পতি, চন্দ্র, সূর্য ও শুক্র। ফলে এই নবগ্রহ শান্তির বার্তাও থাকতে পারে মোদীর আলো জ্বালানোর তত্ত্বে— উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকেই।
কেউ কেউ আবার বলছেন, ভাগ্যিস ৯ টাকা দামের মোমবাতি কিনতে বলেননি। তাহলে এই লকডাউনের মধ্যে যে কী হত!
কিন্তু শুধু নয়-এর তত্ত্বেই থেমে থাকেননি নেটাগরিকরা। রাজনীতির শ্লেষ, কটাক্ষ, ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপও তার সঙ্গে যোগ হয়েছে। লকডাউন ঘোষণার পর রাস্তায় রাস্তায় পরিযায়ী শ্রমিকদের জনস্রোত, হাসপাতালে সুরক্ষা পোশাক, ভেন্টিলেটরের অভাব, প্যাথল্যাবে কিটের হাহাকার থেকে শুরু করে নানা খামতি তুলে এনে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এই সব ঢাকতেই কি গিমিকের পথে মোদী? জনতা কার্ফুর দিন বিকেল পাঁচটায় হাততালি, থালাবাসন বাজানোর ধুম দেখে আঁতকে উঠেছিল দেশ। দূরত্বই যেখানে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মূল অস্ত্র, সেখানে বহু মানুষ দল বেঁধে খোল-কর্তাল বাজিয়ে কীর্তন করেছেন। কেউ বা তাসা, ব্যান্ড পার্টি নিয়ে বেরিয়েছেন, বাজি পটকাও পোড়ানো হয়েছে দল বেঁধে। মোমবাতি জ্বালানোর ঘোষণা শুনে আবার মশাল মিছিলে নেমে পড়বেন না তো ‘ভক্ত’রা। এমন কটাক্ষেও বিঁধেছেন অনেকে।