ফেসবুক এবং টুইটার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কয়েকজন রাষ্ট্র-নেতার পোস্ট ডিলিট করেছে যেগুলোতে করোনাভাইরাস সম্পর্কে মিথ্যে তথ্য ছড়ানো হচ্ছিল।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেয়ার বোলসোনারোর এরকম একটি ভিডিও ফেসবুক ডিলিট করা হয়েছে। এটিতে দাবি করা হয়েছিল ‘হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন’ করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় খুবই কার্যকরী।
প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো বার বার করোনাভাইরাসের বিপদকে খাটো করে দেখাতে চেয়েছেন। এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা যেসব পরামর্শ দিচ্ছিলেন, বিশেষ করে লোকজনকে পরস্পরের কাছ থেকে দূরে থাকার যে পরামর্শ, সেগুলো তিনি উপেক্ষা করতে ব্রাজিলের মানুষকে উৎসাহিত করছিলেন।
টুইটার ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর একটি টুইট ডিলিট করেছে একই রকম কারণে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের একটি ঘরোয়া টোটকা চিকিৎসা টুইট করেছিলেন প্রেসিডেন্ট মাদুরো।
বড় বড় রাষ্ট্র-নেতাদের পোস্ট ফেসবুক বা টুইটার ডিলিট করছে এমন ঘটনা বিরল। অতীতে কোন কোন ক্ষেত্রে রাষ্ট্র-নেতারা ভুয়া বিষয় প্রচার করছেন এমন প্রমাণিত হওয়ার পরও সেসব পোস্ট ডিলিট করা হয়নি।
যেমন টুইটার এর আগে একবার বলেছিল, বিশ্বনেতারা নিয়ম ভাঙলেও তারা এসব পোস্ট ডিলিট করবে না, কারণ সাধারণ মানুষের এগুলো নিয়ে বিপুল আগ্রহ আছে।
কিন্তু করোনাভাইরাসের বেলায় যেরকম গুজব আর মিথ্যে তথ্য ছড়াচ্ছে তা ঠেকাতে বিরাট চাপের মুখে পড়েছে ফেসবুক আর টুইটারের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো।
টুইটার চিকিৎসা নিয়ে অপপ্রচার মোকাবেলা সংক্রান্ত গাইডলাইন সম্প্রতি আপডেট করেছে। আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য নির্দেশনার বিপক্ষে যায় এমন যে কোন বিষয়কে তারা এখন অপপ্রচার বলে গণ্য করবে।
অন্যদিকে ফেসবুক অঙ্গীকার করেছে, শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে এমন তথ্য তারা তাদের সাইট থেকে অপসারণ করবে।
প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর একটি পোস্টে দেখা যাচ্ছিল তিনি টাগুয়াটিংগার একটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন।
ফেসবুক জানিয়েছে তারা প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর এই ভিডিওটি ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম- দু জায়গা থেকেই অপসারণ করেছে। কারণ এই পোস্ট তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড লঙ্ঘন করছিল।
পরবর্তীকালে ফেসবুক দুটি নিউজ-সাইট ‘বাজফীড’ এবং ‘দ্য ভার্জ’কে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর এই ভিডিওটিতে ‘হাইড্রাক্সিক্লোরোকুইন’ সম্পর্কে কিছু দাবি করা হয়েছিল। সে কারণেই ভিডিওটি অপসারণ করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, করোনাভাইরাসের এখনো পর্যন্ত কোন প্রমাণিত চিকিৎসা নেই, যদিও কিছু কিছু ঔষধের মিশ্রণ ব্যবহার করে হয়তো কিছুটা উপশম পাওয়া যাচ্ছে।
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এবং এটির একটি উপাদান ক্লোরোকুইন করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় কার্যকর এমন প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই দুটি ঔষধ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
তবে কোন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন’ (এফডিএ) এই দুটি ঔষধ কোভিড-নাইনটিন রোগীদের জরুরী চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে বলে অনুমোদন দিয়েছে। এতদিন এই দুটি ঔষধ মূলত ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হতো।
এফডিএ বলেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই দুটি ঔষধ যে ফল দিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে, তার তুলনায় এটি ব্যবহারের ঝুঁকি সেরকম বেশি নয় বলেই মনে করে তারা।