কলকাতা প্রতিনিধি : আজ পয়লা এপ্রিল থেকে স্বল্প সঞ্চেয় সুদের হার এক ধাক্কায় অনেকটা কমিয়ে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। করোনার আতঙ্কে ভুগছেন সাধারণ মানুষ, জিনিসপত্রের দামও ক্রমশ চড়ছে এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপে রীতিমতো ক্ষুব্ধ আমজনতা। বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের পাশাপাশি প্রবীণ নাগরিকদের জন্য নির্দিষ্ট স্কিমেও সুদের হারেও কোপ পড়েছে।
এদিকে, কলকাতায় ভর্তুকিবিহীন রান্নার গ্যাসের বাজার দর ৬৫ টাকা কমালো কেন্দ্রীয় সরকার। তারা জানিয়েছে, আজ পয়লা এপ্রিল থেকে ১৪.২ কেজি সিলিন্ডারের দাম হবে ৭৭৪ টাকা ৫০ পয়সা। পাশাপাশি ১৯ কিলো বাণিজ্যিক গ্যাসের দাম কমেছে ১০১ টাকা ৫০ পয়সা। আজ থেকে তার দাম দাঁড়ালো ১৩৪৮ টাকা ৫০ পয়সা।
কতটা কমল সুদের হার? কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক জানাচ্ছে, তারা শুধু সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে। তা চার শতাংশই রাখা হয়েছে। এক বছর, দু’’বছর এবং তিন বছরের টাইম ডিপোজিটে যেখানে এতদিন পর্যন্ত সুদের হার ছিল ৬.৯ শতাংশ, সেখানে তা ৫.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
পাঁচ বছরের টাইম ডিপোজিটের সুদের হার ছিল ৭.৭ শতাংশ। তা কমিয়ে ৬.৭ শতাংশ করা হয়েছে। পাঁচ বছরের রেকারিং ডিপোজিট বা আরডিতে সুদের হার ৭.২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫.৮ শতাংশ করা হয়েছে। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমে সুদের হার ৮.৬ শতাংশ ছিল। করা হয়েছে ৭.৪ শতাংশ। মান্থলি ইনকাম স্কিমে সুদ রাখা হয়েছে ৬.৬ শতাংশ। তা এতদিন পর্যন্ত ছিল ৭.৬ শতাংশ। ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট বা এনএসসিতে সুদের হার ছিল ৭.৯ শতাংশ। তা কমিয়ে ৬.৮ শতাংশ করা হয়েছে। পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পি পি এফের সুদের হার ছিল ৭.৯ শতাংশ। তা কমিয়ে ৭.১ শতাংশ করা হয়েছে। কিষাণ বিকাশ পত্রে সুদের হার ছিল ৭.৬ শতাংশ। এখন সুদের হার কমিয়ে করা হলো ৬.৯ শতাংশ। সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্টের সুদের হার ৮.৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭.৬ শতাংশ করা হয়েছে।
স্বল্প সঞ্চয় সুদের হার কমানো হবে, এমন আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। বাজারে যাতে নগদ টাকার জোগান বাড়ে, তার জন্য দিন কয়েক আগেই রেপো রেট অনেকটা কমিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তারা আশা প্রকাশ করেছিল, ব্যাঙ্কগুলিও সুদের হার কমানোর পথে হাঁটবে। এর আগেও একাধিকবার রিজার্ভ ব্যাংক রেপো রেট কমালেও, ব্যাঙ্কগুলি ঋণের উপর সুদের হার কমায়নি।
কেন কমেনি ঋণের উপর সুদের হার? ব্যাঙ্কগুলির অধিকাংশের দাবি ছিল, ঋণের উপর সুদের হার কমাতে গেলে ডিপোজিট বা আমানতের ওপর সুদের হারও কমাতে হবে। কিন্তু স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প বা বলা ভালো, ডাকঘরের প্রকল্পগুলিতে যদি সুদের হার বেড়ে থাকে, তাহলে প্রতিযোগিতার বাজারে ব্যাঙ্কগুলি পিছিয়ে পড়বে। যতক্ষণ না কেন্দ্রীয় সরকার ডাকঘর প্রকল্পের সুদের হার কমাবে, ততক্ষণ ডিপোজিট এর উপর সুদ কমানো সম্ভব নয়। যদি ডিপোজিট এর উপর সুদের হার কমানো যায়, তাহলে ঋণের ওপর সম্ভব হবে।
মনে করা হচ্ছে, ব্যাঙ্কগুলির সেই যুক্তিকে মেনে নিয়েই কেন্দ্রীয় সরকার স্বল্প সঞ্চয় বা ডাকঘরের সঞ্চয় প্রকল্পগুলির উপর সুদের হার কমাল।