উত্তর সিটির একজন কাউন্সিলর দেখিয়ে দিলেন ‘চাইলেই সম্ভব’
তিনি রাষ্ট্র বা সরকার ব্যবস্থার খুব বড় কোনও ক্ষমতাসীন পদে অধিষ্ঠিত নন। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে, প্রয়োজন হলে যখন যা দরকার তা আদায় করে নেয়ার প্রেক্ষাপটটাও বহু নিয়ম, বিধান আর লম্বা প্রক্রিয়ার মধ্যে আবদ্ধ। মানুষের দাবির মুখে, তাদের প্রত্যাশা পূরণে চাইলেই প্রতিজ্ঞা করা সম্ভব নয় তার পক্ষে। কারণ সেই সবকিছু পাওয়ার জন্য তাকেও তাকিয়ে থাকতে হয় ওপরের দিকে। তা সে এলাকার রাস্তা, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ কিংবা ত্রাণ-তহবিল যাই হোক না কেন। কারণ তিনি স্থানীয় একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাত্র।
কিন্তু এত সব সীমাবদ্ধতার মাঝে থেকেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একজন কাউন্সিলর দেখিয়ে দিলেন, শুধু মানুষের জন্য ভালোবাসা থাকলে, অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। চাইলেই প্রমাণ করা যায়, সত্যিই ‘ভালবাসার নৌকা পাহাড় বাইয়া চলে’।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে বিপর্যয়, তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। প্রতিটি পর্যায় থেকে বিশেষ করে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই সঙ্কট মোকাবেলায় চলছে নিরন্তর প্রচেষ্টা। কিন্তু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নানা অব্যবস্থাপনা ও অসতর্কতার কারণে সংক্রমণ ঘটেছে করোনার। আর সেই সঙ্কট আরও প্রকট করে তুলছে কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং স্থানীয় জন প্রশাসন ও সরকার ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্তদের কাণ্ডজ্ঞানহীনতা। রয়েছে অধিকাংশ স্থানে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা জনপ্রতিনিধিদের অপ্রত্যাশিত নিরবতা ও নিষ্ক্রিয়তার ব্যাপারটিও।
তবে এরই মাঝে একেবারেই ব্যতিক্রম হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন যুবরাজ। সঙ্কট সূচনার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত তার প্রতিটি কাজকর্ম ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে সর্বত্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বরাতে স্থানীয় এলাকা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের শুভেচ্ছায় ভাসছেন তিনি।
৫৪ নং ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি মোড়ে পথচারীদের হাত-মুখ ধোয়ার জন্যে কলযুক্ত পানির ড্রাম ও সাবান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে খাবার বা আনুষঙ্গিক কোনও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের প্রয়োজন আছে কিনা। শুধু তাই নয় প্রশাসন ও সেনা সদস্যদের নিয়ে দ্বারে দ্বারে গিয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের তথ্যও। রাস্তায় চলাচলকারী শ্রমিক শ্রেণির কান ধরে উঠবোস করানোর পরিবর্তে পড়িয়ে দেয়া হচ্ছে মাস্ক, রিক্সার পাটাতনে তুলে দেয়া হচ্ছে সামর্থ্যমত খাদ্যের ব্যাগ। একটি ওয়ার্ড যেন সমস্ত দেশকে দেখিয়ে দিচ্ছে- কীভাবে পারা যায় বিস্তৃত এই কাজকে সফলভাবে পালন করা। ফলাফল, এখন পর্যন্ত অত্র এলাকা থেকে সংক্রমণের কোনও তথ্য কোথাও নেই। স্থানীয় দোকানিরা বলছেন, নিয়মিত জীবাণুনাশক স্প্রের ফলে অনেকটা আস্থা নিয়েই তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাজ চালিয়ে যেতে পারছেন। আর এর সবই করা হচ্ছে কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন যুবরাজের প্রত্যক্ষ নজরদারিতে।
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি জানান, সরকারের নেতৃস্থানীয় পর্যায় যখন মানুষের জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে তখন তার প্রতিটি পর্যায় সেই মতো সব নির্দেশনা মানতে বাধ্য। আমরা শুরু থেকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তৎপর হই যেখানে অসাধারণ সাড়া দিয়েছে এলেকাবাসী। আমার এলাকার প্রতিটি মানুষ যার যার অবস্থান থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার প্রতিটি নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। আমরা সম্মিলিতভাবে এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বলেই এখন পর্যন্ত সফল এবং আগামীতেও প্রয়োজনে এভাবে চলবো ইনশাহ আল্লাহ।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, কাউন্সিলরের অনুপ্রেরণায় এলাকার তরুণ সমাজ তাদের জন্যে নিবেদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারা এই জনপ্রতিনিধির কাজে নিজেদের সন্তুষ্টির কথাও জানান।
২০১৯ সালে বাংলাদেশব্যাপী যখন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সৃষ্টি হয় তখনও কাউন্সিলর যুবরাজের তৎপরতা ব্যাপকভাভে প্রশংসিত হয়। সে সময় এই এলাকা থেকে একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীও শনাক্ত হয়নি। স্থানীয় এই জনপ্রতিনিধি ও তার এলাকার সাধারণ মানুষ স্থানীয়ে পরিসরে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সারা দেশের জন্যে অনুসরণীয় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন।
বিশ্বব্যাপী এই মহাসঙ্কট নিরসনে সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো সমন্বিত প্রচেষ্টার ব্যাপারে। স্থানীয় পর্যায় থেকে প্রতিটি এলাকায় এই কার্যক্রম চালানো গেলে সমন্বিত ভাবে তা গোটা দেশের জন্য একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে বলেই সবার বিশ্বাস |
এসকে