পুলিশের হস্তক্ষেপে একজন শিল্প উদ্যক্তা আকিজ গ্রুপ - এর মানবিক উদ্যোগ। কিছু অবুঝ মানুষের অর্বাচীন আচরন। নামকাওয়াস্তে কিছু সমাজ সেবকের অমঘ লোভ। শেষে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ।ফমাফল, আপাতত নির্মাণের বাধা কাটল।
করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৩০১ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করছে শিল্প গ্রুপ আকিজ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় আকিজ গ্রুপের হাসপাতাল নির্মাণের কাজে বাধা দিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর ও কিছু মানুষ। আজ শনিবার বেলা একটার দিকে শ দুয়েক মানুষ এসে কিছুক্ষণ অবস্থান নেন ও প্রতিবাদ জানান। এ ঘটনার পর হাসপাতাল নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
স্থানীয় লোকজন জানান, শিল্প এলাকার ১৮৪ নম্বর প্লটে নির্মাণাধীন হাসপাতালের লোকজন আসার পর সেখানে আসেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিউল্লাহ শফি।
শফিউল্লাহ শফি তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘এখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল হবে শুনে হাজারখানেক লোক এসেছিল। আমি এসে তাদের শান্ত করি।’
স্থানীয় লোকজনকে তিনিই এখানে নিয়ে এসেছিলেন, এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শফিউল্লাহ শফি বলেন, ‘এই লোকজন আমার না, তারা স্থানীয় মানুষ।’
এখানে হাসপাতাল করার বিষয়ে শফিউল্লাহর অভিমত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা যেহেতু মহল্লা হচ্ছে, তাই এখানে করোনারভাইরাসে আক্রান্তদের হাসপাতাল হওয়া ঠিক হবে না। আমি এটার পক্ষে না।’
ঘটনাস্থলে তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক রুহুল আমিন বলেন, কাউন্সিলর আসার পর বেশ কিছুক্ষণ এখানে স্থানীয় লোকজন ছিলেন। পরে তাঁরা চলে যান। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
আকিজ গ্রুপ আশা করছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতালটিতে রোগীদের চিকিৎসা শুরু করা যাবে। এটি তৈরি হচ্ছে তেঁজগাও-গুলশান লিংক রোডের শান্তা টাওয়ারের পেছনে। আকিজ সেখানে বিনা মূল্যে রোগীদের চিকিৎসা দেবে।
এই হাসপাতাল নির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্যাহ চৌধুরী বলেন, হাসপাতাল নির্মাণে বাধার কথা তিনি শুনেছেন। আকিজ গ্রুপের লোকেরা তাঁকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় কাউন্সিল এটা করাচ্ছেন। তিনি গুজব তৈরি করে লোকজন জড়ো করে এটা করছেন। বলা হচ্ছে, এখান থেকে ভাইরাস ছড়াবে। এখানে তো পরীক্ষা করা হবে। ছড়াবে কীভাবে?
জাফরুল্যাহর অভিযোগ, স্থানীয় কাউন্সিলর টাকা-পয়সা নেওয়ার জন্য এটা করছেন। তাঁর প্রশ্ন, এই লোকের এত বড় ধৃষ্টতা হয় কীভাবে। তিনি বলেন, ‘এখন পুলিশ গিয়েছে। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে।’
জাফরুল্যাহ বলেন, এই হাসপাতাল নির্মাণে আকিজ জমিসহ আরও সহায়তা দিয়েছে।
শনিবার বেলা একটার দিকে শ’দুয়েক লোক এসে কিছুক্ষণ অবস্থান নিয়ে হাসপাতালটি নির্মাণের প্রতিবাদ জানায়। তারা হাসপাতাল নির্মাণের কাজ কিছু সময়ের বন্ধ করে দেয়। পরে সেখানে আসেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিউল্লাহ শফি।
এ সময় কাউন্সিলর সাংবাদিকদের বলেন, এখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল হবে শুনে হাজারখানেক লোক এসেছিল। আমি এসে তাদের শান্ত করি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক রুহুল আমিন বলেন, কাউন্সিলর আসার পর বেশ কিছুক্ষণ এখানে স্থানীয় লোকজন ছিলেন। পরে তারা চলে যান। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি ভালো কাজ। আমরা এ ধরনের উদ্যোগের পক্ষে। সব ধরনের সহযোগিতার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। তবে আকিজ গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রথমে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সমালোচনা করে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সমাজে কিছু লোক থাকে তারা যে কোনো ভালো কাজে বাধা তৈরি করে। স্থানীয় জনগণকে উসকে দিয়ে ব্যক্তিগত ফায়দা লুটতে চায়। লোক পাঠিয়ে আবার নিজেই এসেছেন সরিয়ে নিতে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে তার কোনো ভূমিকা নেই। স্থানীয় জনগণকে কোনো ধরনের সহযোগিতা এই ওয়ার্ড কাউন্সিলর করছে না।
তিনি বলেন, জরুরি ভিত্তিতে তেজগাঁওয়ে টিবিএস মোটরসাইকেল বিক্রির যে শোরুমটি ছিল সেটিকে অস্থায়ী হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহযোগিতায় এখানে কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কি না তা সনাক্ত করা এবং আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হবে।
শেখ শামীম বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এই হাসপাতালটি হবে ৩০১ শয্যার। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আকিজের নিজস্ব দুই বিঘা জমিতে হাসপাতালটি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি দুই সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতালটি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া শুরু করতে পারবে। এটি তৈরি হচ্ছে তেঁজগাও-গুলশান লিংক রোডের শান্তা টাওয়ারের পেছনে। আকিজ গ্রুপ সেখানে বিনা মূল্যে রোগীদের চিকিৎসা দেবে। আমাকে সমর্থন দিচ্ছেন আকিজের চেয়ারম্যান সেখ নাসির উদ্দিন ও অন্যান্য পরিচালকেরা। এ ছাড়া সহায়তা করছেন দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
শামীম উদ্দিন বলেন, আকিজ গ্রুপের পরিচালকেরা ব্যবসার বিভিন্ন বিভাগ থেকে নানাভাবে মানুষকে সহায়তা করছেন। তারা মাস্ক তৈরি করে দিয়েছেন। খাদ্য বিতরণ করছেন। জীবাণুনাশক বিতরণ করছেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আকিজ গ্রুপের এই উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আকিজ গ্রুপ জনগণের সেবায় এগিয়ে এসেছে। তাদের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তাদেরকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।