নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাজারে চাহিদা কমেছে পোলট্রি মুরগির। এজন্য হ্যাচারি থেকে বাচ্চা কেনা বন্ধ রেখেছেন খামারিরা। এতে দ্রুত সময়ে খামারে স্থানান্তর না করায় প্রতিদিন যশোরের বিভিন্ন হ্যাচারিতে অন্তত দুই লাখ বাচ্চা মারা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মালিকরা। আবার স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন প্রক্রিয়াও তাত্ক্ষণিকভাবে বন্ধ রাখা যাচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন কোটি টাকা লোকসান গুনছেন হ্যাচারি মালিকরা। পোলট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত খামারি ও খাদ্য উৎপাদনকারীরাও এ লোকসানের বোঝা বইছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোরাঞ্চলে আফিল হ্যাচারি, কাজী ফার্মসসহ পাঁচটি হ্যাচারিতে প্রতিদিন চার লাখ বাচ্চা উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতিটি বাচ্চা উৎপাদনে হ্যাচারি মালিকদের খরচ হয় ৩২ টাকা। করোনার প্রভাবে পোলট্রি মুরগির বেচাকেনায় ধস নেমেছে। হ্যাচারি থেকে খামারিরা বাচ্চা কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। যশোরের সবচেয়ে বেশি বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আফিল এগ্রো লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন এক লাখের বেশি বাচ্চা উৎপাদন করে।
এ ফার্মের টেকনিক্যাল ম্যানেজার তোফায়েল আহমেদ বলেন, ডিম পাড়ানোর চার মাস আগে একটি মুরগি প্রস্তুত করা হয়। এ মুরগি টানা দেড় বছর ডিম দেয়। প্রতিদিন বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ২১ দিনের ডিম ইনকিউবেটর মেশিনে চাপাতে হয়। একদিন বয়সী বাচ্চা বিক্রি করা হয়। বাচ্চা উৎপাদন বন্ধ করতে হলে কমপক্ষে ২১ দিন অপেক্ষা করতে হয়। আবার উৎপাদন প্রক্রিয়া একবার বন্ধ করলে পুনরায় চালু করতে অনেক ব্যয় হয়। সে ক্ষেত্রে হ্যাচারি একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে। এতে প্রতিষ্ঠানটি শতাধিক কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়বে।
পোলট্রি শিল্পের সবচেয়ে বড় বিপণন কোম্পানি তামিম মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) খন্দকার ইদ্রিস হাসান জানান, একদিন বয়সী প্রতিটি বাচ্চা উৎপাদনে খরচ হয় ৩২ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে এক টাকারও কম। তাও আবার ক্রেতা খুঁজে আনতে হচ্ছে। শুধু বাচ্চা নয়, লেয়ার মুরগির ডিম ও পোলট্রি ফিডের ওপরও এর প্রভাব পড়েছে।
তার দেয়া তথ্যমতে, যশোরাঞ্চলে আফিল, কাজী, চীফ, প্রভিটা ও প্যারাগনের ফিড মিল রয়েছে। এসব মিলে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ টন ফিড উৎপাদিত হয়। চাহিদা কমে যাওয়ায় ফিডের বেচাকেনাও কমে গেছে।
তামিম মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের উপব্যবস্থাপক (ব্রয়লার) আব্দুল মুকিত জানান, যশোরাঞ্চলের এক হাজার খামার থেকে প্রতিদিন গড়ে ১১ লাখ কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে শুধু আফিল ফার্ম খেকে উৎপাদিত হয় দিনে ২৫ হাজার কেজি। এক কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস উৎপাদনে খরচ হয় ১১০ টাকা। বর্তমানে বাজার পড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের বাজারও পড়তির দিকে।
তিনি বলেন, যশোরাঞ্চলে প্রতিদিন ৫ লাখ ডিম উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে আফিল ফার্ম উৎপাদন করে ৪ লাখ। প্রতিটি ডিম উৎপাদনে খরচ সাড়ে সাত টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ছয় টাকা।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে পোলট্রি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সাধারণ ক্রেতারা পোলট্রি কেনা থেকে বিরত থাকছেন। এ কারণে খামারিরাও উৎপাদিত মুরগির দাম পাচ্ছেন না। ছোট ছোট খামারি এরই মধ্যে উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। বড় ব্যবসায়ীরা উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল রাখতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। লোকসানের কারণে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আফিল এগ্রো লিমিটেডের পরিচালক মাহাবুব আলম লাবলু। তিনি এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম মোল্লা বণিক বার্তাকে বলেন, করোনার প্রভাবে যশোরাঞ্চলে পোলট্রি শিল্পে আঘাত পড়েছে বলে জানতে পেরেছি। পোলট্রির মাংস ও ডিম খেলে কোনো ক্ষতি নেই। বরং উপকার। এতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু লোক পোলট্রির মাংস নিয়ে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তার কোনো ভিত্তি নেই। তিনি সবাইকে দুধ ডিম মাছ মাংস খাওয়ার পরামর্শ দেন।
বনিক বার্তা