সামাজিক বিচ্ছিন্নতার এই পর্যায়ে যৌন সম্পর্কের সুযোগ কম৷ একা থাকলে সময়টা বড় কঠিন৷ কিছু দম্পতি দ্বিতীয় মধুচন্দ্রিমা উপভোগ করলেও অনেকের কাছে সময়টা নরকের জ্বালা হয়ে উঠছে৷
করোনা ভাইরাস সব কিছু বদলে দিচ্ছে৷ এমনকি আমাদের যৌন সম্পর্কও করোনার থাবার বাইরে নেই৷ বার্লিন শহরে মার্চ মাসের মাঝামাঝি এক শুক্রবার সন্ধ্যায় তার লক্ষণ দেখা গেল৷ শহরে খোলামেলা সম্পর্কে বিশ্বাসী দম্পতিদের ক্লাব ‘ইনসোমনিয়া’-র দরজায় এ দিন প্রহরীকে আর দেখা গেল না৷ আশেপাশে একই ধরনের প্রতিষ্ঠানের হালও আলাদা নয়৷
একা থাকার জন্য ভালো সময় নয়
ক্লাব বন্ধ থাকলেও মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে বার্লিনে রেস্তোরাঁ, ক্যাফে ইত্যাদি কিন্তু খোলা ছিল৷ বন্ধুদের সঙ্গে বসন্তের রোদ উপভোগ করতে করতে এক তরুণী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এত সময় থাকলে বসন্তকালেই করোনা ভাইরাসকে আসতে হলো! আমাদের মতো সিঙ্গলদের জন্য সময়টা মনে হয় ভালো যাচ্ছে না৷”
এর ঠিক পরেই বার্লিনে সব নাচের স্কুল, রেস্তোরাঁ ও পানশালা বন্ধ হয়ে যায়৷ ফলে নিঃসঙ্গ মানুষের প্রেম-ভালবাসা বা যৌন অ্যাডভেঞ্চারের যাবতীয় সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল৷ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই আজকাল লাখ লাখ নারীপুরুষ ইন্টাননেটে ডেটিং ওয়েবসাইটে সঙ্গী খোঁজার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু এখন ভাইরাস নিয়ে দুশ্চিন্তা সেই সুযোগ আরও সীমিত করে দিচ্ছে৷ তবে পারশিপ নামের এমনই এক ওয়েবসাইটের মুখপাত্র জানিয়েছেন, যে সদস্যদের মাসুল এখনো মোটেই কমে নি৷ বরং বর্তমান পরিস্থিতিতে সাক্ষাৎ আলাপের সুযোগ না থাকায় অনেকে অনলাইনে আলাপচারিতা করছেন৷
কিন্তু প্রশ্ন হলো, মাসের পর মাস ধরে শুধু বার্তা লিখে মানুষ কি খুশি থাকতে পারবে, নাকি সংক্রমণের ঝুঁকি সত্ত্বেও তারা সারাসরি সাক্ষাতের পথে এগোবে? মনে রাখতে হবে, ‘কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ’৷ একাকিত্ব কাটাতে নিঃসঙ্গ মানুষ আরও বেশি করে পর্নোগ্রাফি ও সেক্স টয়েজের দিকে হাত বাড়াচ্ছে৷
দম্পতিদের বাসায় থাকার সুযোগ
দম্পতিদের যৌন সম্পর্কের জন্য সঙ্গী খোঁজার প্রয়োজন নেই৷ এমনকি স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়ায় বাসায় থেকে যৌনজীবন আরও চাঙ্গা করার সুযোগ পাচ্ছেন অনেক দম্পতি৷ অন্য কিছু করার বেশি সুযোগ না থাকায় সময় কাটাতে যৌনমিলনই হয়ে উঠছে সেরা কার্যকলাপ৷
তবে সবার জন্য সঙ্গীর সঙ্গে একই ছাদের নীচে দিনের পর দিন কাটানো মোটেই সুখকর হচ্ছে না৷ যেমন কর্মসূত্রে রল্ফকে সারা সপ্তাহ ধরে স্ত্রীর থেকে দূরে থাকতে হতো৷ হোম অফিস করার সুযোগ পেয়ে তিনি শুরুতে খুশি হলেও এক সপ্তাহ পর তিনি হাড়ে হাড়ে টের পেলেন, যে সারাক্ষণ বাসায় থাকা তাঁর জন্য মোটেই সুখকর নয়৷ সংসারের কাজ ভাগাভাগি করা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে বচসার ফলে যৌনমিলনও মোটেই আানন্দদায়ক হচ্ছিল না৷ ফলে তিনি আবার নিজের ছোট বাসায় ফিরে গেলেন৷ এক বিশেষজ্ঞের মতে, সঙ্গী সবসময়ে কাছে থাকলে আকর্ষণ অনেক সময়ে কমে যায়৷ বিচ্ছেদের ফলে সেই আকর্ষণ বেড়ে যেতে পারে৷ আবার আতঙ্ক ও ত্রাসের সময়ে যৌনতা ভয় তাড়াতে সাহায্য করে৷
করোনা ভাইরাসের কারণে ‘বেবি-বুম’?
বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ সত্যি যৌনজীবন চাঙ্গা করে তুলতে পারলে হাতেনাতে তার ফলও পাওয়া যেতে পারে৷ নয় মাস পরে অনেক বেশি সংখ্যায় শিশুর জন্ম হলে তা জানা যাবে৷ এমন অনুমানের পক্ষে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না থাকলেও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে বা দীর্ঘ সময় খারাপ আবহাওয়া থাকলেও এমন পূ্র্বাভাষ শোনা যায় বৈকি৷
বেটিনা স্টেকেম্পার/এসবি