করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে আজ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নামানো হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে সেনাবাহিনী প্রশাসনকে সহায়তায় নিয়োজিত হবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে তারা জেলা ও বিভাগীয় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করবে। গতকাল সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের নেয়া সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার উপস্থিত ছিলেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী ২৬শে মার্চ থেকে পরবর্তী ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬, ২৭ ও ২৮শে মার্চ সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটি। ২৯শে মার্চ থেকে ৪ঠা এপ্রিল সাধারণ ছুটি থাকবে।
এই সময়ে ওষুধ ও খাবারের দোকান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জরুরি সেবা কার্যক্রম চালু থাকবে। ছুটির আওতায় কারা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের জন্যই এই সাধারণ ছুটি প্রযোজ্য। ছুটির সময় গণপরিবহন বন্ধ না হলেও চলাচল সীমিত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনের পর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ২৪শে মার্চ থেকে সামাজিক দূরত্ব, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা পর্যালোচনায় বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় সশস্ত্র বাহিনী নিয়োজিত থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ ক্রয়, চিকিৎসা ও মৃতদেহ সৎকার ইত্যাদি) বাড়ির বাইরে না আসার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এই সময়ে বিভিন্ন অফিস-আদালতের প্রয়োজনীয় কাজ অনলাইনে সম্পাদন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি অফিসগুলোর মধ্যে যারা প্রয়োজন মনে করবে, তারা অফিস খোলা রাখবে। ছুটিকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং ধর্মীয় নেতাদের অনুশাসন কঠোরভাবে মেনে চলার ‘বিশেষ অনুরোধ’ জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। অসুস্থ সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মসজিদে না যেতে বারবার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। তা ভঙ্গ করে একজন মিরপুরে মসজিদে যাওয়ার জন্য অন্য ব্যক্তিও আক্রান্ত হয়েছেন। গণপরিবহন বন্ধ হচ্ছে কিনা- জানতে চাইলে জানানো হয়, সরকার তা বন্ধ করছে না। কেননা, জরুরি প্রয়োজনে অনেকের তা প্রয়োজন হতে পারে। তবে গণপরিবহন চলাচল সীমিত থাকবে। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, জনসাধারণকে যথাসম্ভব গণপরিবহন পরিহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যারা জরুরি প্রয়োজনে গণপরিবহন ব্যবহার করবেন, তাদেরকে অবশ্যই করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়া থেকে মুক্ত থাকার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গাড়িচালক এবং সহকারীদের অবশ্যই মাস্ক ও গ্লাভস পরাসহ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গণপরিবহন চালু রাখার বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, লকডাউন (সম্পূর্ণ) লকডাউন সায়েন্টিফিক নয়। গণপরিবহন চালু থাকবে, কোনোভাবেই বন্ধ করা হবে না। কেউ যদি শহরে যায় বা গ্রামে যায়, তাহলে চলাচল প্রয়োজন হতে পারে। বাড়িতে থাকার জন্য বলা হয়েছে, গণপরিবহন ব্যবহারে সতর্ক করা হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসছে কিনা- জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, কীভাবে রোগীকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করবেন, কোন্টা নিউমোনিয়া, কোন্টা জেনারেল ফ্লু, সেটা কীভাবে বাছাই করবে, আমাদের যে চিকিৎসা প্রটোকল আছে, তা শেয়ার করা হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের কোনো ব্যক্তি শহরে জীবনযাপন অক্ষম হলে সরকার তাকে ‘ঘরে ফেরা কর্মসূচি’র অধীনে নিজ গ্রামে/ঘরে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। জেলা প্রশাসকরা এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। সরকার এ লক্ষ্যে ভাষানচরে পর্যাপ্ত আবাসন ও জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করেছে। আগ্রহী ব্যক্তিদের সরকার এ সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে। ভাষানচরের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে নিজেদের স্বনির্ভর করে তোলার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ব্যক্তিকে সেখানে প্রেরণের জন্য সব জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর ছুটির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, এক্ষেত্রে কারখানা মালিকরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। আমাদের যারা হেলথ প্রফেশনাল আছে তাদের সঙ্গেও আলাপ হয়েছিল (বিষয়টি নিয়ে), গার্মেন্টে যারা কাজ করে, সেটা আমরা ক্লোজ মনিটরে রেখেছি।