গত দুই দিনের ব্যবধানে রাজধানীতে খুরচা বাজারে চালের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৪ থেকে ৭ টাকা। পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে গ্রামপর্যায়ে খাদ্যপণ্য মজুত করার কারণে দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা মোকামেই বাড়ানো হয়েছে বলে পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
শুক্রবার (২০ মার্চ) দুপুরে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ মার্কেট ও মোহাম্মদপুর বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। দুপুরে মোহাম্মদপুর চালের মার্কেটের সামনে পিকআপ ভ্যান সাজিয়ে রাখা হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে চাল নেওয়ার জন্য। কাওরান বাজার, বৌবাজার, নবোদয় বাজারসহ বিভিন্ন ছোট বাজার থেকে আসা এসব ভ্যানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চাল। প্রতিটি পাইকারি দোকানেই ভিড় ছিল সকাল থেকেই। কোনও ব্যবসায়ীর কথা বলার সময় নেই বেচা-বিক্রির ব্যস্ততার কারণে।
ব্যস্ততার মধ্যেই রাজশাহী ট্রেডার্সের মালিক মুক্তার হোসেন জানান, চালের দাম বস্তাপ্রতি মোকামে বেড়েছে ১০০ টাকা। মিল মালিকরা দাম বাড়িয়েছে। সেই হিসেবে কেজিতে এক টাকা বেড়েছে। মিনিকেট ৫০ কেজির চালের বস্তা বিক্রি করছি ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫৫০ টাকায়। এটা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। আমি আগের দামেই বিক্রি করছি কারণ চাহিদা আছে, কম লাভেই চলবে।’
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ দোকানে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত। যদিও কেউ দাম বলতে চাচ্ছেন না। ব্যবসায়ীরা জানান, মোকামে চালের দাম বেড়েছে। কোনও কোনও দোকানে মোটা ২৮ চাল ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হতে দেখা গেছে ২ হাজার ৩৫০ টাকা। অথচ কয়েকদিন আগেও এই চাল বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯৫০ টাকায়।
চাল
চাল
খুরচা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চালের দাম যে আড়ত যেভাবে পারে তাই নিচ্ছে। মোহাম্মদপুরের খুরচা ব্যবসায়ী শফিকুর রহমান আজম বলেন, ‘বস্তাপ্রতি ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা কম-বেশি রেখে দুটি ভাউচার করা হচ্ছে। বেশি দামের ভাউচারের টাকা আমাদের কাছ থেকে রাখা হচ্ছে।’
খুরচা ব্যবসায়ী আখতার হোসেন বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ৫০ কেজি বস্তার যে চাল কিনেছি ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫৫০ টাকায়, সেই চাল কিনতে হয়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৭৫০ টাকায়। আগের চেয়ে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বেশিতে চাল বিক্রি করছি।’ আরেক খুরচা ব্যবসায়ী আখতার বলেন, ‘ডিম ও আলুর দামও বেড়েছে। আলুর দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা।’
মোহাম্মদপুরের ডিলার হাবিব বলেন, ‘মোকামে দাম বাড়েনি। যা বেড়েছিল সামান্য কয়েক দিনের জন্য। এখন করোনার কারণে ক্রেতার চাপ থাকায় যে-যার মতো বাড়িয়ে দাম নিচ্ছে। সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে দেড়শ বস্তা চাল বিক্রি করেছি। আর ৯০ বস্তা লাল আটা বিক্রি করে এখন বসে চা খাচ্ছি। মানুষ চাল ও লাল আটা চাচ্ছে। কিন্তু দিতে পারছি না।’
ডিলার হাবিব আরও বলেন, ‘লাল আটা বিক্রি করেছি ৮৬৪ টাকায় আর ৫০ কেজির বস্তা চাল বিক্রি করেছি ২ হাজার ৫১ টাকা থেকে দুই হাজার ৫২ টাকায়। বাড়তি কোনও দাম নেওয়া হয়নি, কারণ আজ-কালের মধ্যে দাম বাড়েনি।’
কৃষি মার্কেটের রাজশাহী ট্রেডার্সের মালিক মুক্তার বলেন, ‘৪৫ টাকা কেজির পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৭০ টাকায়। খুচরা বিক্রি হবে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশিতে। মোহাম্মদপুরের খুচরা ব্যবসায়ী এখলাস ও শরিফ বলেন, ‘৫০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি দুদিন আগে। আজ ৭০ টাকায় কিনে এনেছি। বিক্রি করছি ৮০ টাকায়।’
ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণ ক্রেতারা অতিরিক্ত কিনছে। যার ১০ কেজি চাল দরকার সে কিনছে ২ বস্তার বেশি। আর যার এক বস্তা চাল লাগবে সে কিনছে ১০ থেকে ২০ বস্তা। এভাবে সাধারণ ক্রেতারা বাজারে ভিড় করে কেনার কারণে কিছু ব্যবসায়ী সুযোগ বুঝে বেশি দামে বিক্রি করছে।