সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে পারছেন না? অফিস ডেডলাইন সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ? এর সমস্ত কিছুর পিছনেই রয়েছে টাইম ম্যানেজমেন্টের সমস্যা। সময় বুঝে, সময়ের সীমা মেনে কাজকর্ম সারার সহজ গাইডলাইন দিলেন জয়ন্তী মিত্র।
রোজকারের জীবনের প্রধান সমস্যাই হচ্ছে দিনের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ঘরের ও বাইরের সমস্ত কাজ শেষ করা। ধরা যাক আজ সকালের কথাই। সকাল আটটা বেজে পাঁচ। ঠিক পনেরো মিনিটের মধ্যেই ছেলেকে স্কুল বাসে তুলতে হবে। এদিকে ঠিক একই সময়, হাজ়বেন্ডের ব্রেকফাস্টও দিতে হবে। অন্যদিকে আপনার রান্নার লোক বাজার করতে যাবে বলে আনাজের লিস্ট চাইছে। এত কিছুর মধ্যে হঠাত্ ছেলে এসে বলল, যে সে অঙ্ক হোমওয়কর্র্ করতে ভুলে গেছে। এরই মধ্যে আবার আপনার বস্ ফোন করে তাড়াতাড়ি অফিস পৌঁছে মিটিং কল করতে বলছেন। আপনি একা হাতে একসঙ্গে আর কত কিছু সামলাবেন? তবে এইরকম সিচ্ুয়েশানে মাথা গরম না করে, ঠান্ডা মাথায় পর পর কাজের তালিকা করে অল্প সময়ের সঠিক ব্যবহার করুন। তবে সিস্টেম্যাটিকভাবে করলে কিন্তু সবকিছুই করতে পারবেন। প্রয়োজন শুধু টাইম ম্যানেজমেন্ট। এই সবকিছু মাথায় রেখে আমাদের মূল্যবান সময়ের সুব্যবহার এবং প্ল্যান করে ঠিকমতো কাজ করতে হবে।
কিন্তু এত ব্যস্ততায় কী ভাবেই বা করবেন আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট? সব সময়ই তো আমরা ব্যস্ত। কিন্তু অসম্ভব কিছুই নয়। এর জন্য প্রয়োজন একটু ইচ্ছে, একটু ধৈর্য আর একটু উদ্যোগ। আপনাদের এই চেষ্টার জন্য রইল কিছু সহজ টিপস্।
প্ল্যানিং করুন
সংসার এবং বাইরের যাবতীয় কাজের লিস্ট একটা নোটবই বা ডায়েরিতে নোট করে রাখুন। যাঁরা অতটা পরিশ্রম করতে চান না,তাঁদের জন্যে পোস্ট ইট খুব কাজের জিনিস। পোস্ট ইট-এ পরের দিনের জরুরি কাজের লিস্ট করে আটকে রাখুন ফ্রিজের গায়ে। চোখের সামনে তালিকা থাকলে এক এক করে কাজ শেষ করতে সুবিধে হবে। ভুল হওয়ার সম্ভবনাও অনেকটাও কমে যায়। অফিসের কাজ সামলানোর জন্যে প্রয়োজন একটা প্ল্যানার এবং ডায়েরি। ওয়র্কস্টেশনের সামনে লাগিয়ে রাখুন ক্যালেন্ডার কাম প্ল্যানার। নির্দিষ্ট তারিখের তলায় সময় দিয়ে লিখে রাখুন আগাম কাজ। ডায়েরিতেও একটা ছোট্ট নোট রাখুন। অফিস আওয়ার্সের শুরুতে একবার চেক করে, হাত দিন রোজকার কাজে। কাজের ফাঁকে টু ডু লিস্ট চেক করুন এবং যে কাজগুলো হয়ে গেছে সে গুলো টিকমার্ক করুন। এর ফলে নানান কাজের মধ্যে কোন কাজই গুলিয়ে যাবে না।
সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করুন
মাল্টিটাস্কিং সফল করার জন্যে একটা শক্তপোক্ত ব্যক্তিগত নেটওয়র্ক থাকা খুবই জরুরি। নেটওয়র্ক বলতে আমরা এমন কিছু পরিচিত মানুষজনের কথা বলছি যাঁরা আপনার শুভার্থী এবং আপনার জন্যে প্রয়োজনে কিছুটা সময় স্পেয়ার করতে পারবেন। বাপের বাড়ি-শ্বশুরবাড়ি-প্রতিবেশী-নিজের বন্ধুবান্ধব-কোলিগ-সন্তানের বন্ধুদের পরিবারের মধ্যে একটা দৃঢ় যোগাযোগ বজায় রাখুন। অফিসে ইয়ার এন্ডের ঝামেলা চলছে। এমনই এক মোক্ষম দিনে বাচ্চার আয়া অনুপস্থিত। এ ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য নিতেই হবে আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবদের। অফিসের কাজ সামলে আপনি না হয় একটু তাড়াতাড়ি চলে এলেন বাচ্চাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্যে। এভাবেই আপনার নেটওয়র্কের সঙ্গীদের সুখেদুঃখে বা অসুবিধেয় পাশে দাঁড়ান। অতএব মাস্টিটাস্কিংয়ের সঙ্গী হিসেবে কিছু মানুষের সাহায্য চাই-ই।
অযথা সময় নষ্ট করবেন না
খুবই সীমিত সময়ের মধ্যে যেহেতু সংসার এবং অফিসের কাজ শেষ করার চাপ থাকে, সেই কারণেই যে সব কাজে অযথা সময় নষ্ট হয় সেগুলো থেকে একটু দূরে থাকাই ভাল। যেমন ধরুন অফিসে ভীষণ চাপ কিন্তু আপনার মন পড়ে আছে সোশাল নেটওয়র্কিং সাইটের চ্যাটে। কাজের সময় খানিকটা নষ্ট করে চ্যাটও করে ফেললেন কিছুটা। ফলে কাজের চাপ সামলাতে সামলাতে রাত হয়ে গেল। বাড়ি ফিরে আপনজনদের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম আর সেইদিন আপনার কাটানো হলো না! কাজের সময় চ্যাট করা, এসএমএস পাঠানো বা ই-মেল চেক করা থেকে বিরত থাকলে অনেকটা সময় বাঁচে। ঠিক একইভাবে বাড়িতে যখন কাজের চাপ তখন টেলিভিশনে চ্যানেল সার্ফ করা একটু কমালেই প্রয়োজনীয় সময় বাঁচবে।
ফোনের সময়
ফোনে কতটা সময় কথা বলবেন সেটা একটু খেয়াল রাখবেন। অফিসে কাজের সময়, আড্ডা বা পার্সোনাল টক না করলে অনেকটা কাজের সময় বাঁচানো যাবে। বাড়িতে ও কাজের সময় ফোনে বেশি কথা না বলাই বরং ভালো। মনে করুন আপনি অফিসে বসে আপনার বন্ধুর
বিয়ের শপিং আলোচনা করেন তাহলে আপনার কাজও হয় না অথচ সময়টাও পুরো নষ্ট হয়। এভাবে বাড়ির কাজ করার সময় ফোনে টেলি কনফারেন্সিং করলে, কোনও কাজটাই আপনার ঠিকমতো হবে না। ফোনে কখন, কী কথা বলবেন সেটা সময় বুঝে খেয়াল রাখুন। হাতের কাছে রাখুন যাবতীয় ফোন নাম্বার এবং ই-মেল আই ডি। চটজলদি কাজ সারতে এর কোনও জুড়ি নেই। তবে মোবাইলের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করাই ভাল। মোবাইল হারিয়ে ফেলা বা ভুল করে ফেলে আসার ঘটনা তো আজকাল সাধারণ ঘটনা। কোনও অবসরে বসে মোবাইলে স্টোর করা নাম্বারগুলি ছোট্ট হ্যান্ডি টেলিফোন ইন্ডেক্সে টুকে রাখুন। নতুন নাম্বার ফোনে স্টোর করার সঙ্গে সঙ্গে ওখানে টুকে রাখতে ভুলবেন না। এই মোক্ষম অস্ত্রটি হাতে থাকলে অফিসে যাতায়াতের পথে সহজেই কথা বলে নিতে পারেন মেয়ের টিউটরের সঙ্গে। অফিসের কাজের ফাঁকে ডিনারে স্বামীকে সারপ্রাইজ় দেওয়ার জন্যে পছন্দের রেস্তরাঁ থেকে চাইনিজ় ডিনার অর্ডার দিয়ে দিতে পারবেন। এতে ছোটাছুটিও কম হবে। সময় প্রায় লাগবে না বললেই চলে।