প্রায় তিন মাস আগে নভেল করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পর বুধবার প্রথমবারের মত কোনো নতুন রোগী পাওয়া যায়নি চীনের হুবেই প্রদেশে, যে অঞ্চলকে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের উৎসস্থল বলা হচ্ছিল।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন বলছে, হুবেইয়ের বাইরে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বুধবার সব মিলিয়ে মোট ৩৪ জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে এবং তাদের সবাই বিদেশ থেকে ভাইরাস নিয়ে এসেছেন।
অর্থাৎ, এদিন চীনের মূল ভূখণ্ডে স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত কোনো নতুন রোগী পাওয়া যায়নি।
দেশটির চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন প্রতিদিনের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ শুরু করার পর এটাও প্রথম ঘটল বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে গার্ডিয়ান।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশে মৃত্যুর সংখ্যাও এখন সীমিত রয়েছে এক অংকের মধ্যে, সংক্রমিত রোগীদের মধ্যে আটজন এদিন মারা গেছেন। তাতে চীনে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৪৫ জনে।
সব মিলিয়ে চীনে এ পর্যন্ত আক্রান্তের মোট সংখ্যা পৌঁছেছে ৮০ হাজা ৯২৮ জনে। তাদের মধ্যে ৭০ হাজার ৪২০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন বলে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের ভাষ্য।
হুবেই প্রদেশের উহান শহরে গত ডিসেম্বরের শেষে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। ওই শহরের একটি সি ফুড মার্কেট থেকেই ভাইরাসটি প্রাণী থেকে মানুষের দেহে সংক্রমিত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ সে সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মারাত্মক আকার নিতে শুরু করায় এর বিস্তার ঠেকাতে জানুয়ারির শেষে উহান এবং এক পর্যায়ে প্রায় পুরো হুবেই প্রদেশ কার্যত অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়। চীন থেকে বিভিন্ন দেশে ভাইরাস ছড়াতে থাকায় বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
নানা কঠোর পদক্ষেপে চীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ পর্যন্ত সফলতা পেলেও নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ১৬৬টি দেশ ও অঞ্চলে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় দুদিন আগে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে বাকি বিশ্ব।
নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে যে রোগ হয়, তাকে বলা হচ্ছে কভিড-১৯। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে এ রোগকে বৈশ্বি মহামারী ঘোষণা করেছে। আর ইউরোপকে বলা হচ্ছে নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তারের নতুন কেন্দ্রভূমি।
চীনের পর সবচেয়ে বেশি দুর্দশায় পড়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, সেখানে আক্রান্ত হয়েছে ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ, মৃত্যু হয়েছে ২৯৭৮ জনের।
কেবল বুধবারই ৪৭৫ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে ইতালি কর্তৃপক্ষ, যা নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর যে কোনো দেশের জন্য এক দিনের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্যের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যের সমন্বয় করে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় যে টালি করেছে, তাতে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বে আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৩ জনে; আর মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৮১০ জনের।
আক্রান্তদের মধ্যে ৮৪ হাজার ১১৩ জন এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে তথ্য দিয়েছেন জনস হপকিন্সের গবেষকরা।