ঘুম ভেঙ্গে হাত বাড়িয়ে দাদাকে ছুতে চাইলাম। এটা আমার প্রতিদিনের অভ্যাস। দেখি বিছানা ফাকা। আধো ঘুম আর আধো জাগরনে দূর থেক ভেসে আসা কান্নার শব্দ আর শোরগোল তন্দ্রার ভাব পুরোপুরি কাটিয়ে দিলো। বিছানা প্রথমে মাকে ডাকলাম, কোন সাড়া না পেয়ে চোখ মেলে বাইরে এসে দেখি, গ্রামের সব মানুষ আমাদের উঠনে ভেংগে পড়েছে।
একটু পরে মাকে পেলাম, চোখদুটো ফোলা। বোঝা যাচ্ছে অনেক কান্নার ফল এটি।কানাঘুষা থেকে বুঝতে পারলাম দাদাকে কারা নাকি ধরে নিয়ে গেছে। কারো কাছে জানতে চাইবো কি ঘটেছে বাড়ীতে, সে সুযোগ পাচ্ছি না কোনো ভাবেই।
তিনদিন পর দাদা ফিরত এলেন। স্ক্রাচে করে। তারো কিছুদিন পর দাদা না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
বাবার কাছে পরে জেনেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধে সহায়ক ভূমিকা রাখার জন্যে হানাদার বাহিনী আমার দাদাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন।
সেই থেকে মুক্তি যুদ্ধ নিয়ে দারুণ কৌতুহল বাসাবেধেছিলো মনে, বাবার কাছে কচি মনের হাজারো প্রশ্ন।
বাবা মুক্তি যুদ্ধ কি?
বাবার সহজ উত্তর ঃ আমাদের ওরা শোষণ আর শাসন করতে চাই আর আমরা তা মানিনা, আর এজন্যে এদেশ থেকে ওদের তাড়াতে চাই। আমরা চাই না আমাদের ঘাড়ে বসে কেউ ছড়ি ঘুরাক তাই, আমরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে শাড়া দিয়ে অন্যায়কে রুখে দিতে প্রতিরোধ গড়েছি। পাকিস্থানের অন্যায় থেকে আমরা মুক্তি চাই। আর এটাই মুক্তিযুদ্ধ।
কচি মনে হাজারো প্রশ্নের উকি ঝুকি। বাবা মুক্তি যোদ্ধা কারা? কোথায় তাদের দেখতে পাবো?
বাবা হেসে বলেন, কেনো তোমার ঘরে যাও মুক্তিযোদ্ধা দেখেতে পাবে। আমি ঘরে যেয়ে সবখানে খুজে, বিছানায় শুয়ে থাকা দাদা ছাড়া কাউকে খুজে পাই না, আমি ফিরে এসে বাবাকে বলি, কই বাবা কাউকে পেলাম নাতো। বাবা ঠোটে রহস্যের হাসি। তিনি বললেন, কাউকেই দেখলে না?দাদা ছাড়া কাউকেইতো দেখলাম না।
বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে, যারা পাকিস্থানের হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, মরো নাই মারো এই মন্ত্রে যারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, তারা মুক্তিযোদ্ধা, তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে যারা সহযোগিতা করছে তারাও মুক্তিযোদ্ধা।
আবার প্রশ্ন, বাবা বঙ্গ বন্ধু কে? এবার তিনি বেশ গম্ভীর হয়ে গেলেন, কি যেনো ভাবলেন কিছুক্ষন, বঙ্গবন্ধু আমি তুমি সে, সবাই মিলে আমরা, আর এই আমার সমষ্টি বঙ্গ বন্ধু। আমাদের আবেগ, ভালোবাসা আর আশ্রয়। যার জন্যে আমরা মরতে পারি নির্দিধায়।
মুক্তিযুদ্ধ বুঝতে হলে সবার আগে শেখ মুজিবকে জানতে হবে।
আমি জানি আমার কথা তুমি আজ পুরোটা বুঝবে না কিন্তু তোমার মধ্যে একটা চেতনার জন্ম নেবে এবং একটু একটু করে তোমার অনুভূতিকে জাগিয়ে তুলবে, আজীবন ধারণ করতে অনুপ্রেরনা যোগাবে।
বাবা বলছেন আর আমি মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে শুনছি,
অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বাঙ্গালী বরাবরই এগিয়ে ছিল। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বাঙ্গালীর কন্ঠ ছিল স্লোগানমুখর। উনসত্তরের আইয়ুববিরোধী গণঅভুত্থ্যানের মঞ্চে বাঙ্গালীর সংগ্রামী চরিত্র আরেকবার নতুন করে জন্ম নেয়।
পাকিস্তানের ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের মূলে কুঠারাঘাত করে বাঙ্গালী ছাত্র ও সাধারণ মানুষের কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের মূলমন্ত্র। ঢাকার রাজপথ প্রকম্পিত হতে থাকে তোমার আমার ঠিকানা/পদ্মা মেঘনা যমুনা‘, পিন্ডি না ঢাকা/ঢাকা ঢাকা, তুমি কে আমি কে/বাঙ্গালী বাঙ্গালী এ ধরনের স্লোগান। কিন্তু বাঙ্গালীর রক্তে আগুন ধরানো আসল স্লোগান তখনো রয়ে গেছে পর্দার আড়ালে।
পাকিস্তানী শাসকেরা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের এই উত্থানকে ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। আন্দোলন ঠেকাতে মরিয়া হয়ে বাঙ্গালীর মুক্তি সংগ্রামের সামনে থাকা সৈনিকদের নামে ঠুকে দেয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। কিন্তু এই মামলা বাঙ্গালীকে আরো জাগিয়ে তোলে। শেখ মুজিবুর রহমানকে করে পরিণত করে জাতীয় বীরে। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী জেল থেকে মুক্তি পাওয়া শেখ মুজিবুর রহমানকে রেসকোর্স ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কন্ঠ থেকে যে পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু উপাধির জন্ম হয়েছিল, ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের জন্মও সেই অগ্নিগর্ভ থেকেই।
ইয়াহিয়ার টালবাহানা শুরু হয়ে গিয়েছিল ততদিনে। ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশ বাতিলের সাথে সাথে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে ছাত্রজনতা। ডাকসু এবং ছাত্রলীগের প্রাধান চার নেতা সেদিন বিকেলেই দেখা করেন শেখ মুজিবের সাথে।
৭ মার্চের উনিশ মিনিটের ভাষণে বাঙ্গালীর শোষণের যাতাকল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানালেন। ডাক দিলেন ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকার উদাত্ত আহ্বান জানালেন। জনতার অগ্নিগর্ভের সামনে দাঁঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ভাষণ শেষ করলেন জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে। রেসকোর্স ময়দান থেকে উঠা এই রণধ্বনি অব্যাহত ছিল মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধরে। এই স্লোগান বুকে ধরেই মুক্তিসংগ্রামে লড়ে গেছে বাঙ্গালীরা। জয় বাংলা নামের এই সাধারণ একটি স্লোগান বুকে ধরে স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালীরা কাঁপিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানের ভিত্তি, সত্যি করেছে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন।
“শত প্রতিবন্ধকতা, লোভ-লালসা, আত্মকলহ, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দূর করে এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, ‘জয় বাংলা’ আমাদের ধ্যানধারণা, ‘জয় বাংলা’ কেবল একটি স্লোগান নয়, ‘জয় বাংলা’ একটি আদর্শ। ‘জয় বাংলা’ আমাদের মূল উৎস। ‘জয় বাংলা’ আমাদের চলার শেষ প্রান্ত। জয় বাংলা।
শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রকণ্ঠ ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগোষ্ঠিকে মুক্তি ও স্বাধীনতার পথ নির্দেশনা দিয়েছিল।
“…মনে রাখবা- রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।” ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রেস কোর্স ময়দানের এক জনসভায় এই বজ্রঘোষণার মাধ্যমে শেখ মুজিব স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন এবং জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন
ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। ১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তাঁর সাত বছর বয়সে।
খুবই অল্প বয়সে তিনি বিয়ে করেছিলেন সম্পর্কে আত্মীয় বেগম ফজিলাতুন্নেসাকে।
নয় বছর বয়সে তিনি ভর্তি হন গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে এবং পরে ম্যাট্রিক পাশ করেন গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে।
গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে পড়ার সময় ১৯৩৯ সালে স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক এবং পরবর্তীতে বাংলার প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। কাশ্মিরী বংশোদ্ভুত বাঙালি মুসলিম নেতা মি.সোহরাওয়ার্দী পরবর্তীকালে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনকে গভীরভাবে প্রাভাবিত করেছিলেন।
১৯ ৪২ সালে এট্রান্স পাশ করার পর শেখ মুজিব ভর্তি হন কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে যেটির বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এই কলেজটি তখন বেশ নামকরা ছিল। এই কলেজ থেকে তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন।
তবে স্কুল জীবন থেকেই তিনি তাঁর নেতৃত্ব দেবার দক্ষতা প্রমাণ করেছেন।
তিনি ১৯৪৩ সালে যোগ দেন বেঙ্গল মুসলিম লীগে এবং ১৯৪৪ সালে বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্র লীগের সম্মেলনে যোগদানের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে অভিষিক্ত হন।
শেখ মুজিব ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৪৬ সালে এবং এ সময়েই তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সহকারী নিযুক্ত হয়েছিলেন। ওই বছরই প্রাদেশিক নির্বাচনে তিনি মুসলিম লীগের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এসময় তিনি পাকিস্তানে আলাদা মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে বেঙ্গল মুসলিম লীগের হয়ে সক্রিয় আন্দোলনে অংশ নেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকেই ১৯৪৭ সালে তিনি বি.এ. পাশ করেন এবং ভারত ও পাকিস্তান পৃথক হয়ে যাওয়ার পর শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্মীদের বিক্ষোভে ‘উস্কানি’ দেবার অভিযোগ এনে কর্তৃপক্ষ তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করায় আইন পড়া তাঁর শেষ হয়নি।
তিনি ১৯৪৮ সালে জানুয়ারির ৪ তারিখে প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ যার মাধ্যমে তিনি একজন অন্যতম প্রধান ছাত্র নেতায় পরিণত হন। এ সময় তিনি ঝুঁকে পড়েন সমাজতন্ত্রের দিকে এবং মনে করতেন দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য একমাত্র পথ সমাজতন্ত্রের বিকাশ।
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেবার পর এর বিরুদ্ধে যে গণ আন্দোলন শুরু হয়, সে আন্দোলনে একটা অগ্রণী ভূমিকা ছিল শেখ মুজিবের।
বিভিন্ন আন্দোলনে তাঁর ভূমিকার জন্য ১৯৪৮ সাল থেকে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাভোগ করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং মওলানা ভাসানী ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করার পর শেখ মুজিবুর রহমান মুসলিম লীগ ছেড়ে দিয়ে এই নতুন দলে যোগ দেন এবং তাঁকে পূর্ব পাকিস্তান অংশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নামে যে বিরোধী রাজনৈতিক মঞ্চ গঠিত হয়েছিল, তার মূল দাবি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য অধিকতর স্বায়ত্তশাসন। এই জোটের টিকেটে ১৯৫৪র নির্বাচনে গোপালগঞ্জ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন শেখ মুজিব। তাঁকে তখন কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
টিকেটে নির্বাচনে জেতার পর শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে শপথ নিচ্ছেন। তাঁকে শপথ পড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক।
কিন্তু নির্বাচনের কয়েক মাসের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার ওই যুক্তফ্রন্ট ভেঙে দেয়।
১৯৫৫ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ আওয়ামী মুসলিম লীগের বিশেষ অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে দলের নাম থেকে “মুসলিম” শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছিল। শেখ মুজিব আবার দলের মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছিলেন।
পাকিস্তানে ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি করা হয়। সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে সংগ্রামের কারণে তাঁকে কয়েক বছর আবার জেল খাটতে হয়েছিল।
এরপর ১৯৬১ সালে অন্যান্য সাধারণ ছাত্রনেতাদের নিয়ে গোপনে তিনি স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে এক সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করা।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর ১৯৬৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার দায়িত্ব নেন। ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “ছয় দফা দাবি” পেশ করেন।
“শেখ সাহেব সাহস করে ছয় দফা ঘোষণা করলেন, তাও করলেন তিনি লাহোরে। পশ্চিম পাকিস্তানে একটা সম্মেলনে গিয়ে তিনি ওই ছয় দফা ঘোষণা করলেন, যার ফলে ওঁনাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে যে মামলাটি হয় তাতে এক নম্বর আসামী করা হলো ১৯৬৮ সালের ৩রা জানুয়ারি,।
এই মামলায় বলা হয়েছিল শেখ মুজিব ও তাঁর সহযোগী বাঙালি কর্মকর্তারা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা শহরে ভারত সরকারের সাথে এক বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করেছে।
ওই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেশব্যাপী যে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় তা এক সময় গণ আন্দোলনে রূপ নেয়। সেই গণ আন্দোলন বা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান চরম রূপ ধারণ করলে পাকিস্তান সরকার শেষ পর্যন্ত এই মামলা প্রত্যাহার করে নেয় এবং শেখ মুজিবসহ অভিযুক্ত সকলকে মুক্তি দেয়া হয়।
এটা আমি বলব একটা পালাবদল। কারণ পল্টনে তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেয়ার মাধ্যমে তিনি হয়ে উঠলেন জনগণের অবিসংবাদিত নেতা।
“ওঁনাকে ছাড়ানোর জন্য যে আন্দোলন হয়েছিল যেটা ছাত্রদের ১১ দফায় রূপ নিয়েছিল, সেইখান থেকে মুক্তি পাওয়ার পরদিনই তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হলো।
রেস কোর্স ময়দানে ২৩শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ এক বিশাল জনসভায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শেখ মজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়া হয়েছিল।
উনিশশ’ ৭০-এর নির্বাচনে শেখ মুজিব তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়টিকে মূল বক্তব্য হিসাবে তুলে ধরেছিলেন,
“ছয় দফা না বলে আঙুল তুলে বলতেন আমার দাবি ‘এই’ অর্থাৎ দেশ স্বাধীন করতে হবে,” । এই দাবিকে শেখ মুজিব ব্যাখ্যা করেছিলেন ”আমাদের বাঁচার দাবি” হিসাবে।
এই ছয় দফা দাবির পক্ষে ১৯৬৬ সালের ৭ই জুন দেশব্যাপী শুরু হয়েছিল তীব্র গণ আন্দোলন ।
শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের তিনটি বড় গুণ ছিল তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী, দৃঢ়চেতা এবং আপোসহীন।
“পাকিস্তান রাষ্ট্রে প্রধান দ্বন্দ্ব কী সেটাকে তিনি খুব সঠিকভাবে চিহ্ণিত করতে পেরেছিলেন। অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েই তিনি জেনে নিয়েছিলেন যে বাঙালির সঙ্গে পাকিস্তানের দ্বন্দ্বটাই ছিল প্রধান দ্বন্দ্ব। তাঁর মধ্যে অসাধারণ একটা আকর্ষণী শক্তি ছিল- ক্যারিশমা। তিনি জনগণকে বুঝতেন, জনগণের সঙ্গে মিশতে পারতেন, তাদের ভাষা জানতেন, তাদের উদ্বুদ্ধ করতে পারতেন।”
মি. সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর আয়োজিত এক জনসভায় শেখ মুজিব যখন ঘোষণা করলেন যে এখন থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে “বাংলাদেশ” নামে অভিহিত করা হবে, তখন পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ ও সামরিক কর্তারা তাঁকে একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার তকমা দিলেন।
শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, প্রাদেশিক আইনসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে ওই নির্বাচনী ফলাফল পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে মেরুকরণ তৈরি করল। পশ্চিম পাকিস্তানের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো, শেখ মুজিবের স্বায়ত্বশাসনের নীতির প্রবল বিরোধিতা করলেন।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা বুঝতে পারল যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও শেখ মুজিবুর রহমানের দলকে সরকার গঠন করতে দেয়া হবে না।
ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ এক জনসভায় শেখ মুজিব স্বাধীনতার ডাক দিলেন এবং জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হবার আহ্বান জানালেন। যার মধ্যে দিয়ে শুরু হল বাংলাদেশের নয় মাস ব্যাপী সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম।
বাবা আজ বেচে নেই, কিন্তু তার দিয়ে যাওয়া উপলব্ধি আমাকে জাগিয়ে রাখে।সাহস যোগায় সত্যের পথে থাকতে, চেতনায় জয় বাংলা ধারন করে রাখতে। মুক্তি যুদ্ধের মানে নতুন করে খুজতে হয় না। শেখ মুজিবকে তার আদর্শকে আকড়ে থাকতে আর তাকে নিয়ে গর্ব করতে কাউকে শিখিয়ে দিতে হয় না নতুন করে। প্রয়োজন হয় না সার্থের প্রয়োজনে ক্ষ্মতার কাছাকাছি যেতে।
মুজিব আমার আমার ভালোবাসা, চেতয়াই জাগ্রত সারাক্ষন।