বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করেছে নভেল করোনাভাইরাস। চীনের উহান থেকে এই ভাইরাসটির উৎপত্তি হলেও এটি দ্রুতই বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে। পুরো বিশ্ব এই প্রাণঘাতী ভাইরাস নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এ পরিস্থিতি এই করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কর্মকৌশল ঠিক করতে রবিবার দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত ৮টি দেশের নেতারা ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় একটি কৌশল প্রণয়নের লক্ষ্যে সার্ক নেতারা এই কনফারেন্সে যোগ দেন। গত শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী যে প্রস্তাব দেন, বাংলাদেশসহ সব সার্ক সদস্য দেশ তাতে সাড়া দেয়। সবশেষ শনিবার সাড়া দেয় পাকিস্তান।
একটি দৃঢ় কৌশল প্রণয়নের’ লক্ষ্যে আজকের (রবিবার) ভিডিও কনফারেন্সে সার্কের সব নেতাদের মুখেই ছিল ঐক্যের বার্তা। এমনকি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের নেতাদের মুখেও ছিল করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলকে নিরাপদ করতে ঐক্যের বার্তা।
রোববার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ভিডিও কনফারেন্স শুরু হয়। এতে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম মোহাম্মদ সলিহ, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং।
তবে অন্য সব দেশের সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত থাকলেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দেশটির একজন উপদেষ্টা জাফর মির্জা।
কনফারেন্সের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেন। এ সময় তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এটিকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমাদের দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। তাই এ দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি যেমন অবমূল্যায়ন করা যাবে না, তেমনই অযথা আতঙ্কিতও হওয়া যাবে না।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ভারতে গৃহীত পদক্ষেপ বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমাদের দেশে ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, প্রতিটি প্রদেশকে আলাদাভাবে প্রস্তুত হতে বলা হয়েছে। এ ভিডিও কনফারেন্সের উদ্দেশ্য এ মহামারী মোকাবিলায় আমাদের অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি একে অপরকে জানানো।
মোদি বলেন, সার্কের সদস্য দেশগুলোকে সজাগ থাকা দরকার। যদিও আমরা এখন পর্যন্ত ১৫০ জন করোনা আক্রান্ত পেয়েছি। আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে, আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। করোনাভাইরাসের লড়াইয়ে আমাদের অবকাঠামোগত স্থাপনার কাজ বাড়ানো হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে দেশের প্রত্যেকটি স্তরে বিশেষ প্রটোকল তৈরি করেছি। করোনাভাইরাস বিপর্যস্ত অঞ্চল থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোর কিছু নাগরিককে সড়িয়ে আনতে সহায়তা করেছে ভারত।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সার্কভূক্ত দেশগুলোর জরুরি তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেন মোদি। তিনি বলেন, আমি প্রস্তাব করছি, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আমরা জরুরি তহবিল গঠন করি। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ভারতে গৃহীত পদক্ষেপ বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমাদের দেশে ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, প্রতিটি প্রদেশকে আলাদাভাবে প্রস্তুত হতে বলা হয়েছে। এ ভিডিও কনফারেন্সের উদ্দেশ্য এ মহামারী মোকাবিলায় আমাদের অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি একে অপরকে জানানো।
মোদি বলেন, সার্কের সদস্য দেশগুলোকে সজাগ থাকা দরকার। যদিও আমরা এখন পর্যন্ত ১৫০ জন করোনা আক্রান্ত পেয়েছি। আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে, আতংকিত হওয়া যাবে না। করোনাভাইরাসের লড়াইয়ে আমাদের অবকাঠামোগত স্থাপনার কাজ বাড়ানো হয়েছে।
ভিডিও কনফারেন্সে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি বলেন, ভারত সাংহাই কো-অপারেশনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, চীনও এর সদস্য। আমি চীনের অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য তাদের সঙ্গে আমাদের সমন্বয় বাড়ানোর প্রস্তাব করছি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মাঝে একটি সাধারণ টেলি-মেডিসিন কাঠামো গঠনের প্রস্তাব করছি।
নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চীনের উহান থেকে আমাদের ২৩ জন শিক্ষার্থী ফিরেছেন। এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে পাঁচজন করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি এসেছেন। স্থানীয়ভাবে কোনো সংক্রণের ঘটনা পাওয়া যায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মোকাবিলায় কৌশলগত বিষয় নিয়ে আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিবরাও এ ধরনের সম্মেলনে আলোচনা করতে পারেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করছি, এই সম্মেলন করোনা মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে নতুন পথের দিশা দেবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে যত করোনাভাইরাসের রোগী রয়েছেন তাদের সবাই দেশের বাইরে থেকে এসেছেন৷ অন্য অনেক দেশের মতো স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকিয়া রাখতে পেরেছে সরকার৷ তিনি বলেন, সব দেশের সক্ষমতা ব্যবহারে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে৷ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ ও প্রয়োজনীয় রসদ দিয়ে সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলেও জানান শেখ হাসিনা৷
পরবর্তীকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সার্কের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নিয়েও নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্স আয়োজন করা যেতে পারে বলে প্রস্তাব দেন শেখ হাসিনা৷ এই ধরনের সংকট মোকাবিলায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি সার্ক ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গুতাবায়ে রাজাপাকসে বলেন, করোনার কারণে আমাদের অর্থনৈতিক সমস্যা গুরুতর হয়েছে। গত বছর সন্ত্রাসী হামলার পর বিশেষ করে পর্যটন খাতে আমাদের ধস নামে। আমরা সেটা থেকে উত্তোরণের পথে যাচ্ছিলাম। আমি সার্ক নেতাদের অনুরোধ করব যে, আমাদের পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য একটা ফর্মুলা দাঁড় করানো হোক।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জাফর মির্জাও সমন্বিত কাজের উপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা ভালোটা আশা করলেও সবচেয়ে খারাপ অবস্থার জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে।’
করোনাভাইরাস নিয়ে মোদির জরুরি তহবিলের প্রস্তাবনায় ভিডিও কনফারেন্সে স্বাগত জানান মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের জরুরি তহবিল গঠনে বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনীতি পুনরোদ্ধারের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং বলেন, সব সময়ের জন্যই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। যেখানে সারা বিশ্বই সাধারণ রোগ নিয়ে লড়াই করছে। এখন স্ব-স্ব অবস্থান থেকে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে এ সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির এ উদ্যোগ খুবই সময়োপযোগ ও প্রশংসনীয়।