“একজন কর্পোরেট লিডারের প্রধান ভ্যালুজগুলি হচ্ছে সততা , নিয়মানুবর্তিতা , পাংচুয়ালিটি , টার্গেট ড্রিভেন এবং পজিটিভ এটিচিউড। “
উপরের কথাগুলো একজন ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রি লিডারের। ব্যাংকই যার প্রধান অধ্যাবসায় এবং আবেগের জায়গা বললেও সম্ভবত অতুক্তি করা হবে না । তরুন ব্যাংক লিডারদের মধ্যে যার নাম উচ্চারিত হয় বেশ সম্মানের সাথেই। ভবিষ্যতের ব্যাংকিংখাতকে বিজয়ীর বেশে যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবেন সন্দেহাতীতভাবেই তিনি তাদের মাঝে অন্যতম। অবিরাম প্রচেষ্টায় ও নিজ যোগ্যতার প্রমান দিয়েই তিনি আজকের এই সাফ্যল্যকে আপন করে নিয়েছেন।
মানুষ হিসেবে তার রয়েছে বেশ কিছু ক্যরিশম্যটিক গুনাবলী, এর মাঝে উল্লেখযোগ্য একটি গুন হচ্ছে পুর্ব পরিচিত না হয়েও আন্তরিকতা আর পরম মমতায় প্রথম আলাপাচারেই আপনাকে নিমেষেই আপন করে নিবে । এই “পিপলস পারসন” পার্সোনালিটির জন্য নিজ ইন্ডাস্ট্রিতে উনি পৌছে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। তার চেহারা, পোশাক, চালচলন ও কথাবার্তায় ওয়েল গ্রূমড কর্পোরেট ভাবমূর্তি প্রতিফলিত হয়। ব্যক্তিত্ব আর আন্তরিকতা তাকে অন্য মাত্রায় দাড় করিয়ে দিয়েছে।
ক্যরিয়ারের শুরু থেকেই তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেছেন এই ধারাবাহিকতায় । একই জগতে কাজ করা সমকালীন প্রজন্মের অন্যান্যদের থেকে তিনি একটু ব্যতিক্রম আর এক্ষেত্রে, বাকিদের সাথে পার্থক্য করেছে তার ভ্যালুজগুলো। সততা, সময়জ্ঞান, পজিটিভ এটিটিউড, প্রতিষ্টানের প্রতি দায়িত্ববোধ, নিজেকে টার্গেট ওরিয়েন্টেড করে গড়ে তোলা, কাজ জমিয়ে না রাখা, সহকর্মীদের প্রতি দায়িত্ববোধ এসবের হাত ধরে তিনি হেঁটে এলেন বহুদূর, আরো যে অনেক পথ বাকী গন্তব্যে পৌছুতে, তা তার অজানা নয়। তিনি ক্যল্কুলেটিভ রিস্ক টেকার। অনেক কঠিন বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়েই আজকের এই অবস্থানকে নিজের করে নিয়েছেন এই ব্যাংকিং লিডার।
ওনার ভাবনাগুলো বেশ গোছালো আর কথাগুলোর মাঝে ছিলো স্পষ্ট আত্তপ্রত্যেয়ের ছাপ
এন আর বি ব্যাংক দেশের উন্নয়নের সার্থে আর্থিক অর্ন্তভুক্তির জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে, আর এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় আধুনিক ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এগিয়ে যাচ্ছে এনআরবি ব্যাংক “বন্ধু এজেন্ট ব্যাংকিং।“
মোঃ খোরশেদ আলম গত ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে যোগদান করেছেন , এখানে যোগদানের আগে তিনি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসইভিপি) দায়িতব পালন করেন। তার যোগদানের মাধ্যমেই মূলত ব্যাংকটির এস এম ই, রিটেইল, চেনেল ব্যংকিং , কার্ডস ও লার্নিং ইন্সটিটিউট এ ব্যাপক পরিবর্তন ও ভাইব্রেশান পরিল্লখিত হচ্ছে। সত্যিকার অর্থেই উনি একজন কালচারাল চেঞ্জ মেকার।
ব্যাংকিং শিল্পের একজন লিডার, মিঃ আলমের শাখা ব্যাংকিং, ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, এসএমই ব্যাংকিং এবং বিশেষ সম্পদ পরিচালনার রয়েছে সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা ।
জনাব মোঃ খোরশেদ আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক- প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকিংয়ে ২৩ বছরের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন , যিনি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ২য় ব্যাচ ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসাবে ১লা জানুয়ারী, ১৯৯৬ সাল থেকে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন, যেখানে তিনি ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগে ঢাকা ও চট্টগ্রামের শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন। কর্পোরেট রিস্ক, ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধীনে এসএমই ঝুঁকির প্রধান, এসএমই ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান এবং অবশেষে এনআরবি ব্যাংকে যোগদানের আগে বিশেষ সম্পদ পরিচালন বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
মিঃ আলম ওমেগা যুক্তরাজ্যের একজন সার্টিফাইড ক্রেডিট বিশেষজ্ঞ সিএসএ (ক্রেডিট স্কিল অ্যাসেসমেন্ট)। তিনি নিউজিল্যান্ডের কর্মক্ষেত্র দক্ষতা উন্নয়ন একাডেমির (ডাব্লুএসডিএ) সিনিয়র অনুষদ সদস্য এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় বাণিজ্যিক ব্যাংকার এবং এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য বেশ কয়েকটি সেমিনার, কর্মশালা এবং প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেছেন।
কর্পোরেট আড্ডায় মেতেছিলাম এই গুনি মানষোটির সাথে কথোপোথনের কি আর শেষ আছে? ব্যাক্তিগত, সামাজিক,কর্মক্ষেত্র সব আলোচনা আড্ডার মাঝে, কখন যে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছিলো বোঝা গেলো না। সময়ের খেরো খাতায় হিসাব লেখার কোনো ইচ্ছা জাগেনি দুজনা কারোরই। গল্পের মাঝে কিছু প্রশ্ন করে কিছু সমাধান খুজে নেয়া। এই আড্ডা যদি কারো্র জীবন ও কর্মে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলতে পারে,আমাদর প্রয়াস সার্থকতা পাবে।
এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশঃ আপনি জানেন স্মল এন্টারপ্রেনার ডেভেলপমেন্ট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী খুব জোর দিচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে ব্যাংক কিম্বা সরকার এর ভূমিকা কি? কি ভাবে কাজটিকে এগিয়ে নেওয়া যায়?
মো. খোরশেদ আলম : দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ও কর্মসংস্থান সৃষ্ঠির জন্য স্মল এন্টারপ্রেনার ডেভেলপমেন্টের কোন বিকল্প নাই। এ জন্য সরকার ব্যপক উৎসাহ দিচ্ছে, আপনারা হয়তো অবগত আছেন সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসএমই উন্নয়নের জন্য কিছু সমপোযোগি এডভাইস প্রদান করেন, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যখন এসএমই নিয়ে চিন্তাভাবনার প্রতিফলন হচ্ছে তখন কি স্টেক হোল্ডার যেমন অর্থিক খাত, রেগুলেটর, ইউটিলিটি সংস্থাসমুহ , একাডেমিশিয়ান ও অন্যনদের নিয়ে একটি ৩৬০° এপ্রোচ নেয়া বাঞ্ছনিয়। কারন এসএমই শুধু ঋন বা এক্সেস টু ফাইনান্স নয় বরং এটি এক্সেস টু মার্কেট, এক্সেস টু টেকনোলজিসহ এস এম ই ব্যাঙ্কিং হচ্ছে সম্পুর্ন একটি ইকো সিস্টেম।
রেগুলেটর হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কিছু দিক নির্দেশনা আছে তা মুলত এক্সেস টু ফাইনান্স কেন্দ্রিক। এ কারনেই শিল্প মন্ত্রনালয় ২০০৪ সালে এসএমই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে যা মুলত হোলসেল ক্রেডিট ছাড়াও অন্যান্য এজেন্ডা যেমন এস এম ই ক্লাস্টার আইডেন্টিফিকেশন ও বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে সিঙ্গেল ডিজিটে লেন্ডিং, এক্সেস টু মার্কেট, এক্সেস টু টেকনোলজি , ট্রেনিং ও ডেভেলপমেণ্ট নিয়ে সাফল্যের সাথে বেশ কিছু কাজ করে যাচ্ছে।
প্রতিটা ব্যাংকে এসএমই ডিপার্টমেন্ট ফর্ম করতে বলা হয়েছে,, নারী উদ্যোক্তা তৈরির জন্য কাজ চলছে। ব্যাংকগুলোও সাধ্য মতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। রিসেন্টলি, নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে বলা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বলা হয়েছিল যে, প্রতিটা ব্রাঞ্চ থেকে বছরে অন্তত ৪টা গ্রাহক সৃষ্টি করতে হবে তার মধ্যে ২জন কে ঋন দেয়ার জন্য প্রমোট করতে হবে। ঠিক একই ভাবে নতুন উদ্যোক্তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে রিফাইন্যান্সিং ফান্ডও আছে। যার পরিমান ৫০ কোটি টাকা।
এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশঃ কাজের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো কি দেখছেন?
মো. খোরশেদ আলমঃ যে কোন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে গেলে চ্যলেঞ্জ আসবেই, আর একজন ইন্ডাস্ট্রি লিডার হিসাবে অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি আমাদেরকে এখনো বেশ কিছু পথ পাড়ি দিতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে রিস্ক আছে, আবার সম্ভাবনাও অনেক, টেকনোপ্রনার মাঝ থেকে ভবিষ্যতের গুগল, ফেসবুক সৃষ্টও হতে পারে । এসএমই লোনে অনেকেই বলেন যে, মহিলা উদ্যোক্তরা গুড পেমেন্টে মাস্টার এটা যেমন সত্যি, তেমনি ফান্ড ডায়ভারসনও হচেছ, মহিলা উদ্যোক্তাদের হাজবেন্ডদের ব্যবসায়। ট্রেড লাইসেন্স ওয়াইফের নামে করে হাজবেন্ডরা লোন নিয়েছে। কাগজে কলমে দেখাচ্ছেন মহিলা উদ্যোক্তা। এই লোনগুলো যখন ডিফল্ট হচ্ছে তখন ব্যাংকগুলো নাজুক হয়ে যাচ্ছে এবং এস এম ই ও নারী উদোক্তাদের নিয়ে নেগেটিভ পার্সেপশান তৌরী হচ্ছে। আসছে এপ্রীল থেকে সুদের হার এসএমইদের জন্যও এক অংকে নামিয়ে আনা হবে, যা ব্যাংকগুলোর জন্য বেশ কঠিন হবে কারন স্মল লোনগুলোর মনিটরিং খরচ অনেক বেশী, এ হিসেবে ব্যাংকগুলো ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহন করে শুধু কর্পোরেট ব্যাংকিং এ ফোকাস করতে পারে।
এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশঃ আপনার চোখে এস এম ই তে রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো কোথায় মনে হচ্ছে? আরো ডিটেইল করলে ভালো হয়।
মো. খোরশেদ আলম : নতুন উদ্যোক্তা তৈরি রিস্ক ফ্যাক্টর ডেফিনিটলি বেশি। কারণ যে কোনো দেশেই এন্টারপ্রেনারদের শেলফ লাইফ যত বেশি, সেই দেশ ততটাই সাসটেইনেবল। তবে বাংলাদেশের মার্কেটে একটি পসিটিভ দিক হচ্ছে এখানে ব্যাংকগুলো এক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রিফাইনেন্স স্কীম নিয়ে এসেছে, পৃথিবীর কোন দেশেই নতুন উদ্যোক্তাদের কে খুব সহজ শরতে ব্যাংক ফাইন্যন্স করে না। এ কাজটি মুলত হয় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানীগুলো ,এঞ্জেল ইনভেস্টরস অথবা ক্রাউড ফান্ডিং এর মাধ্যমে । ২/৩ বছরের মধ্যেই যদি প্রতিষ্ঠানটা বন্ধ হয়ে যায়, তো সেই ক্ষেত্রে ফাইনান্সিং রিস্ক হয়ে যায়।
এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশঃ আমাদের অর্থনীতির চাকা সামনে এগুনোর উপায় কি? এবং এ ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলি প্রক্রিয়াটিকে এগুতে দিচ্ছে না?
মো. খোরশেদ আলম : ম্যানুফ্যাকচারিং কনসার্ন আসলে আমাদের প্রধান চালিকা শক্তি হওয়া উচিত। আমাদের দেশে যে সমস্ত ব্যাপারগুলো আসলে আমলে নিতে হবে সেটা হচ্ছে জিডিপি গ্রোথে ট্রেডিং খুব একটা মুখ্য ভুমিকা পালন করে না। তাহলে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। এখন রিস্ক হচ্ছে আপনি যে, ছোট ছোট উদ্যোক্তা তৈরি করতে যাবেন, সেখানে বড়দের সাথে টিকে থাকাটা মুস্কিল, তাই সরকারের নিরদিস্ত পলিসি থাকা দরকার। আপনি জাপানে যদি যান, চীনে যদি যান ওইখানে আলাদা ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব আছে, আলাদা ভিলেজ আছে । যারা মেনুফ্যাকচারার আর যারা ছোট ছোট সাপ্লায়ার দুইটার মধ্যে কিন্তু একটা ডিসটিংশন আছে, ডিভিশন আছে। সেখানে এই ছোট ছোট জিনিস নিদৃষ্ট হাব/ভিলেজ থেকে নিতে হবে, কেউ পুরোটা তৈ্রি করতে পারবে না। যেমন একখানে শুধু গ্যাস ক্যাট তৈরি হবে অন্যখানে বিয়ারিং তৈরি হবে এবং বড় কম্পানি এদের কাছ থেকে নিয়ে এসেম্বল করবে। কিন্তু আমাদের দেশে তো এই রকম কোন ব্যবস্থা নাই। তাই সরকারকে পলিসি সাপোর্ট দিতে হবে।
আমরা সবাই মনোপলি ব্যবসা করতে চাই। আমি ইন্ড্রাস্ট্রিয়ালিস্ট আমার ক্ষমতা আছে একাই সব করবো। বেকওয়াড লিংকেজ এবং ফরোয়াড লিংকেজসহ আমি ফুল সেটআপ করে ফেলছি। যার ফলে ছোট ছোট উদ্দুক্তারা হুমকির মুখে পড়ছে। এই যে ছোট ছোট উদ্দুক্তা, তাদের মদ্ধে কিন্তু ইনোভেটিভ আইডিয়া আছে, আপনি মনে করছেন সামনের দিকেই এরাই তো কর্ণধার। এরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, আপনি ওদেরকে সাপোর্ট দিলেন, ছোট ছোট ইন্ড্রাষ্ট্রি করার জন্য অর্থায়নও করলেন। টার্মলোন দিলেন, ওয়ারকিং ক্যাপিট্যাল দিলেন, বিভিন্ন ফরমেটে। পরবর্তীতে বড় একটা জায়ান্ট গ্রুপ যখন একটা বড় সেটআপ করে ফেলছে, তখন কিন্তু ছোটরা আর পাত্তা পাচ্ছে না। তারপর ইম্পোরট সাবস্টিটিউট প্রোডাক্টগুলোকে এনকারেজ করতে হবে, যাতে দেশীয় শিল্পে বিকাশ ঘটতে পারে।
এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশঃ ৬ ও ৯ নিয়ে কি ভাবছেন ব্যাংকগুলো। কি ধরনের সমস্যায় পড়বে ব্যাংগুলো?সমাধানইবা কোথায়? একোটু যদি বলতেন?
মো. খোরশেদ আলম : ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে এনপিএলের যে অবস্থা, প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা সাথে আরো ৪৮ হাজার কোটি টাকা রাইট অফ লোন সহ প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকার ওপরে খেলাপি ঋণ। তো এখন বিশেষ করে সামনে যে নয়/ছয়ের ব্যাপার আসছে, এখন কস্ট অব ফান্ড যদি ৯ এর বেশি হয়, তাহলে তো আপনি লস করবেন, এরপর ক্রেডিট লস বিবেচনায় নিলে আরও লস। তখন, ব্যাংক গুলো টিকে থাকা মুস্কিল হয়ে যাবে।
আপনি সুদের হার ছয়/ নয় করছেন ভালো। ইকোনমির জন্য ভালো, শিল্পোক্তাদের আপনি কম রেটে দেবেন। আপনার কাচামাল, প্রোডাক্টসন কস্ট কমে গেলে, সুদের হার কমলে পণ্যের দাম কমবে। প্রফিটে ভালো প্রভাব পড়বে। এখন ব্যাংকের ১১ লক্ষ /১২ লক্ষ কোটি টাকা যাদি ডিপোজিট হয়, তারমধ্যে দেড় লক্ষ কোটি টাকা যদি মানুষের পকেটে যায়, সেটা উদ্ধারের জন্য কোনো উদ্যোগ না নিলে ব্যাংক বাচানো যাবে না। যারা ডিফল্টার এদেরকে সামাজিক ভাবে বয়কট করতে হবে। এয়ার লাইন্সে ভ্রমনে এদেরকে ফার্স্ট ক্লাস টিকিট বন্ধ করে দেন, এদের ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাবের মেম্বরশিপ বাতিল করে দেন। বলেন, তুমি যতদিন ডিফল্ট থাকবা তুমি সচিবালয়ে পাশ পাবে না।আপনি এগুলো যতদিন পর্যন্ত না করবেন, এই ক্রেডিট ডিফল্ট কালচার যতদিন পর্যন্ত না কমিয়ে নিয়ে আসবেন ততদিন কোনো ভালো উদ্যোগই সফল হবে না।
এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশঃ আমাদের দেশে আমরা অনেক সমস্যা নিয়ে বসবাস করছি। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই। আবার অনেকগুলো অপরচুনিটিইও আমাদের সামনে আছে। সমন্বয় করে কি ভাবে এগুনো যায় বলুন?
মো. খোরশেদ আলম : এখন অন্তরভুক্তিমুলক অর্থনীতিতে এগিয়ে আসতে হবে। আপনি যে কনসেপটার কথা বললেন, সেটাও সত্যিই এপ্রিশিয়েবল। ছোট ছোট উদ্যোক্তা তৈরির জন্য কমিনিটির মতো তৈরি করা। সমবায়ের মতো তৈরি করা। কমবাইন্ড ইনভেস্টমেন্ট হবে এবং কিছু লোক সার্ভিস দেবে। কিছু ইনভেস্টর হবে। কিছু হবে ইকুইটি পার্টনার। সো কনসেপ্ট ইজ গুড। সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য লিডারশিপ দরকার। একটা পরিবার বা একটা গ্রাম একটা মডেল হতে পারে। একটা গ্রামকে যখন একটা আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন, তখন অন্যরা , এই গ্রামটাকে ফলো করতে পারবে। ওখানে চাষবাস থেকে শুরু করে সব কিছুতেই আধুনিকতার ছোঁয়া আসবে। আধুনিকায়নের জন্য কৃষি অফিসাররাও ওতপ্রোত ভাবে জড়িত আছেন। এগুলোর জন্য আসলে একটা ব্রিজিং দরকার। ডিমান্ড সাইড সাপ্লাই সাইডের মধ্যে যদি একটা ব্রিজিং করতে পারেন। যারা তারা কিন্তু আসলে মূল্যটা পাচ্ছে না। আপনারা গ্রামের প্রান্তিক যে লোকটার কথা বলছেন, মহিলার কথা বলছেন, সে একটা শতরঞ্জি বানালো, সে একটা কাঁথা বানালো, তার যদি রিয়াল ভেল্যু শ্রমের মূল্য যে প্রাইজে বিক্রি করছে তার চেয়ে অনেক বেশি। সে যে প্রাইজে বিক্রি করছে, আলটিমেট যারা ইউজার, যারা বায়ার তারা কিন্তু অনেক বেশি দামেই কিনছেন, কিন্তু যারা উদ্যোক্তা সে কিন্তু দামটা পাচ্ছে না। এই জায়গাটাতে যদি প্লাটফর্মটা ওইভাবে সাজানো যায় যে আপনি, মেনুফ্যাকচারিংয়ে আপনি যদি ছোট ছোট হাব করেন, সেটার জন্য একটা মার্কেট ক্রিয়েট করতে হবে । সেটার জন্য আপনার সাপ্লাই সাইডের একটা লিংকেজ করে দিতে হবে।
এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশঃ
আমরা যেটা নিয়ে কাজ করছি বাংলাদেশ এসএমই ক্লাব। আমরা সারা বাংলাদেশের এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদেরকে একটা ক্লাবের মধ্যে নিয়ে আসছি। যাতে করে তারা নিজেদের মধ্যে আদান প্রদান করতে পারে। যেমন ধরেন দিনাজপুরে চাল হয়। তাহলে তারা নিজেরাই ঠিক করে নিলো যে তোমরা চাল দাও আমি বাজারজাত করে দিচ্ছি।
আমরা একটা বিষয় নিয়ে ভাবছি,এবং ইমপ্লিমেন্ট করতে চাচ্ছি।
ধরেন একজন মুড়ি বানাচ্ছে এটা উৎপাদন। ধরেন কোথাও মুড়ীর দোকানদারকে কাঠ সাপ্লাই দিচ্ছে একজন সে কিন্তু ব্যবসা করছে। তারমানে একটা ইন্টারলিংক তৈরি হচ্ছে। কাঠটা না পেলে কিন্তু মুড়িটা ভাজতে পারছে না।
তাহলে কিন্তু মধ্যসত্বভোগীর জায়গাটা আর থাকছে না। নিজেরাই ব্যবস্থা করতে পারছে।
আপনি যে প্রতিবন্ধকার কথা বললেন এগুলো আপনার কাছ থেকে আরো পরিস্কার হলাম। আপনি তো দীর্ঘদিন কাজ করেন। এ কারণে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হলো।
মো. খোরশেদ আলম : আসলে আমি তো দীর্ঘদিন ধরে এসএমই নিয়েই কাজ করি। আমরা সব সময় চাকুরি খুজি, আমাদের ব্লাডের মধ্যে ঢুকে গেছে চাকর হওয়ার প্রবণতা। উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা কেউ করে না। যারা শিক্ষিত তারা কিন্তু এগিয়ে আসতে হবে। এটা একটা সুখের সংবাদ যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে এন্টারপ্রেনার ডেভলপমেন্টের বিভাগ চালু করেছে। ডেফোডিল ইউনিভার্সিটিও শুরু করছে। কিছু কিছু ইউনিভার্সিটি শুরু করছে। এখন আপনি যদি ছোট বেলা থেকেই ব্লাডের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন আপনি উদ্যোক্তা হবেন তাহলে কিন্তু আপনি উদ্যোক্তা হবার চিন্তা করবেন। গার্ডিয়ান লেবেলেও চিন্তা করবে যে ছেলেটা এই সাবজেস্ট নিয়ে পড়ছে তাকে পুঁজি দিয়ে কিভাবে তৈরি করা যায়। আমরা যখন চাকরি পাচ্ছি না তখন একটা ব্যবসা করতে যাচ্ছি। আমি ব্যবসাতে ঢোকার পরে চাকরির জন্য চেষ্টা করি। যেদিন আমি চাকরিটা পেয়ে যাবো সেদিন ব্যবসাটা বন্ধ। যার ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে যাওয়ার হারটা অনেক বেশি।
এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশঃ সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
খোরশেদ আলম : আপনাকেও ধন্যবাদ।